আজ: ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, দুপুর ২:৩০
সর্বশেষ সংবাদ
জেলা সংবাদ, ঢাকা বিভাগ ভরা মৌসুমেও মিলছে না দেশীয় প্রজাতিরকাঙ্খিত মাছ

ভরা মৌসুমেও মিলছে না দেশীয় প্রজাতিরকাঙ্খিত মাছ


পোস্ট করেছেন: অনলাইন ডেক্স | প্রকাশিত হয়েছে: ১৭/১১/২০২৩ , ২:১৬ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জেলা সংবাদ,ঢাকা বিভাগ


শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি: শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়ল বিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ে মিলছেনা দেশীয় প্রজাতির কাঙ্খিত মাছ। বছরের এই সময় অঞ্চলটিকে মাছের ভরা মৌসুম ধরা হলেও জেলেদের জালে দেখা মিলছে এসব মাছ। খাল-বিল, পুকুর-ডাঙ্গার মালিকরাও নিজস্ব ডাঙ্গা-পুকুর পানির দামে বিক্রি করছেন। এসবউন্মুক্ত জলাধার চুক্তিতে কিনেও কাঙ্খিত মাছ না পাওয়ায় পেশাদার জেলেরাও দেখছেন লোকসানের মূখ। শোল, গজার, কৈ, শিং, মাগুর, রুই-কাতল, বোয়াল, পুঁটি, চাকি, খসিলাসহ অন্যান্য প্রজাতির দেশী প্রজাতির ছোট-বড় মাছ এখন প্রায়ই বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে।

আবার স্থানীয় মাছের বাজারে যা পাওয়া যাচ্ছে অতিরিক্ত দামের ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে এসব মাছ ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছেনা। চাষী মাছের দামও বাড়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন নিম্মআয়ের মানুষ। স্থানীয় মাছের বাজারগুলো মাছের আমদানী কম ও অতিরিক্ত দামে বেশীরভাগ ক্রেতাই বাড়ি ফিরছেন শূণ্য হাতে। এছাড়া নিত্যপণ্যসহ সবজির বাজারও উর্ধগতির কারণে ক্রেতারা দিশেহারা হয়ে উঠছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আড়িয়ল বিল ঘেষা বাড়ৈখালী, আলমপুর, গাদিঘাট, টেক্কা মার্কেট, শ্রীনগর বাজার, বালাশুর চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন মাছের বাজাওে দেশীয় প্রজাতির মাছের আমদানী হ্রাস পাচ্ছে।  ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে মিঠা পানির দেশীয় প্রজাতির মাছ থাকলেও দামের কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। দেখা যায়, দেশী শিংয়ের কেজি সর্বনিম্ন ১২০০ টাকা, পুঁটির কেজি ৫০০-৭০০ টাকা, এছাড়া কৈ, মাগুর, বোয়াল, রুই, কাতলসহ অন্যান্য মাছের অতিরিক্ত দামের হাকডাকে বাজার অস্তির হয়ে উঠেছে। বির্স্তীণ আড়িয়ল বিলকে শস্যের পাশাপাশি মাছের ভান্ডার বলা হলেও কালের বিবর্তণে বিখ্যাত বিলটি এখন মাছ শূণ্য হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, বার্ষা কাটিয়ে এই অঞ্চলের খাল-বিলের পানি নামছে। এক দশক আগে বছরের এ সময় দেশী মাছের ছড়াছড়ি ছিল। এলাকার মানুষ ছোটবড় সকলেই দল বেধে খাল-বিল, ডাঙ্গা-পুকুরে মাছ শিকার করতো। অথচ এখন এসব শুধুই স্মৃতি। দেশ থেকে মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে নারীরা মাছের শুটকি শুকাত। এখন শুটকি তো দূরের কথা ঠিকমত খাওয়ার মাছও পাওয়া যায়না। এর অন্যতম কারণ হিসেবে নিষিদ্ধ চায়না দুয়াইর ও কারেন্ট জালকেই দায়ী করছেন তারা। খালে-বিলে জোয়ারের পানি আসা শুরু থেকে ভরাবর্ষার পানি নামার আগমূহুর্ত নিষিদ্ধ এসব জাল পেতে ধ্বংস করা হচ্ছে মাছের বংশ। এসব ফাঁদের হাত থেকে মাছ থেকে শুরু করে কোন প্রকার প্রাণই রক্ষা পাচ্ছেনা। অপর একটি সূত্র জানায়, উপজেলার বালাশুর, ভাগ্যকুল ও বাঘড়া এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে চায়না দোয়াইর তৈরীর প্রায় অর্ধশতাধিক কারখানা। প্রভাবশালীরা কারখানায় উৎপাদণ করছেন নিষিদ্ধ চায়না দোয়াইর/চাই। এসব চায়না ফাঁদ ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

বাড়ৈখালীর সুকুমার দাস, শিপন, অনিল রাজবংশী, গাদিঘাট এলাকার সঞ্জয়, আবুল হোসেনসহ মৎস্য পেশাদার মৎস্য জীবীরা বলেন, পুকুরে মাছের সংখ্যা কমে গেছে। তাই তরপে (জাল) আশানুরূপ মাছ ধরা পড়ছেনা। এর অন্যতম কারণ হিসেবে তারা প্রশ্ন তুলেন বর্ষা জুড়ে ভেসালসহ নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও চায়না দোয়াইরের দিকে। যত্রতত্র এসব জাল ব্যবহারের ফলে দেশী প্রজাতির মাছের সংখ্যা কমছে। স্থানীয় আড়তগুলোতে মাছের আমদানী কমায় দাম বাড়ছে।

শ্রীনগর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার সমীর কুমার বসাক বলেন, খোলা বাজারে দেশী প্রজাতির মাছের পরিমাণ কিছুটা কম এটা ঠিক, তবে চাষী মাছের সংকট নেই। নিষিদ্ধ জাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ধারাবাহিকভাবে মৎস্য অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ভেসালসহ অন্যান্য নিষিদ্ধ জাল জব্দ ও আর্থিক জরিমানা করছি। জলবলের অভাবে আমাদের সব ক্ষেত্রে তা অসাধু মৎস্য জীবীদের সাথে পেরে উঠা সম্ভব হয়না। দেশী প্রজাতির এসব মাছ রক্ষা করতে হলে আমাদের সকলের নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরো সচেতন হতে হবে।

Comments

comments