শেষরাতে পিকআপ নিয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, যেভাবে ধরা পড়ল চক্রটি
পোস্ট করেছেন: অনলাইন ডেক্স | প্রকাশিত হয়েছে: ১৬/০৫/২০২৩ , ৯:২১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অপরাধ,জাতীয়,প্রধান সংবাদ


গত ১২ মে ভোররাত তিনটার দিকে ডিউটি করার জন্য বাসা থেকে বের হন মালিবাগ স্পেশাল ব্রাঞ্চে কর্মরত এক নারী পুলিশ কনস্টেবল। রিকশায় করে ভিভিআইপি ডিউটি করার জন্য অফিস যাচ্ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সামনের মোড়ে পৌঁছামাত্র পেছন থেকে একটি হলুদ ও নীল রংয়ের পিকআপ গাড়ি তার রিকশাটিকে চাপ দেয়। পরে পিকআপ থেকে দুজন নেমে তার হাত ধরেন এবং অন্যজন গলায় চাকু ধরে ভয়ভীতি দেখিয়ে গলায় থাকা স্বর্ণের একটি চেইন, হাতে থাকা ছোট ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ব্যাগের ভেতরে নগদ ৫ হাজার টাকা, মোবাইল ফোন ও আইডি কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
ওই ঘটনায় মামলা হলে তদন্তে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চক্রটির সন্ধান পেতে একে এতে যাচাই করা হয় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা। এসব ক্যামেরা ঘেঁটে দেখার পর গতরাতে রাজধানীর মহাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের চার সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। গ্রেফতারের সময় ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র, পিকআপ ও লুন্ঠিত টাকা এবং চারটি স্মার্ট মোবাইল, তিনটি বাটন মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে কথা বলেন মতিঝিল বিভাগের ডিসি হায়াতুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ডাকাত দলের চক্রটি রাত হলেই ঢাকা মহানগরীতে পিকআপ ভ্যান নিয়ে বেরিয়ে পড়ত। এক স্থান থেকে ডাকাতি করে দ্রুত আরেক স্থানে যেত। নির্জন স্থানে কাউকে পেলেই অস্ত্র ঠেকিয়ে তার স্বর্বস্ব লুটে নিত। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই চক্রটি ঢাকার পথেঘাটে অলিগলিতে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ডাকাতি ও ছিনতাই করত।
হায়াতুল ইসলাম বলেন, গত ১২ মে এসবির এক নারী কনস্টেবল বাসা থেকে ডিউটি করার জন্য বের হওয়ার পর ছিনতাইয়ের শিকার হন। তার কাছে থেকে মোবাইল, সোনার চেইন ও মূল্যবান জিনিসপত্রসহ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায় চক্রটির সদস্যরা।
ওই ঘটনায় নারী কনস্টেবল পল্টন থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় তদন্তে নেমে চক্রটির সন্ধান পাই। তবে আমরা এটাকে ছিনতাই না বলে ডাকাতি বলব কারণ দুইজনের বেশি হলে সেটা দস্যুতা। তারা দুজন একজনের হাতে চাপাতি ধরে তারা সেই নারী ককস্টেবলকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছে থাকা সোনার চেইন, মোবাইল ও কিছু টাকা নিয়ে যায়। এটার জন্য অপরাধীদের ধরতে শতাধিক সিসি ক্যামেরা যাচাই বাছাই করে ফুটেজ সংগ্রহ গ্রুপটাকে শনাক্ত করতে সক্ষম হই।
ডাকাতির পিকআপ দিয়ে ডাকাতি!
ডিসি হায়াতুল বলেন, গত ১২ মে একদিনে চক্রটি রাজারবাগসহ রাজধানীর চার স্থানে ডাকাতি করে। এই কাজে যে পিকআপটি ব্যবহার করা হয়েছিল সেটিও ডাকাতির পিকআপ। পিকআপটি কোথা থেকে ডাকাতি করা হয়েছে এখনো তা জানতে পারেনি পুলিশ। নগরীতে যেখানে এলাকায় পুলিশের টহল থাকে না ডাকাতির জন্য তারা সেসব স্থান বেছে নেয়। এরা সবাই মাদকাসক্ত ও দুর্ধর্ষ। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
এক রাতে চার ডাকাতি!
গত ১২ মে এক রাতে রাজধানীতে চারটি ডাকাতি করে চক্রটি। রাত তিনটার দিকে ধানমণ্ডিতে একটি দোকানে ডাকাতির পর রাজারবাগে গিয়ে নারী কনস্টেবলকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ডাকাতি করে। সেখান থেকে বনানীতে গিয়ে একজন অটোরিকশার যাত্রীর কাছ থেকে মালামাল লুট করে। সেখান থেকে শেষ রাতে তেজগাঁও এলাকায় গিয়ে একটি দোকানে ডাকাতি করে।
তাদের বিরুদ্ধে প্রত্যেকটি মামলা ডাকাতি রুপান্তর হবে। গ্রেফতার চারজন ছাড়াও চক্রটির বাইরে আরও তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে তাদেরকেও গ্রেফতার করা হবে।
ডিসি হায়াতুল বলেন, করোনার সময় মোহাম্মদপুর ও খিলগাঁওয়ে দুটি ওষুধের দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। সেই গ্রুপটির ব্যাপারেও আমরা তথ্য পেয়েছি।