ইটভাটার পেটে তিতাস নদীর পাড়ের মাটি
পোস্ট করেছেন: মতপ্রকাশ ডেস্ক | প্রকাশিত হয়েছে: ১৯/০৪/২০২২ , ১১:৩১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জেলা সংবাদ

ই এম আসাদুজ্জামান আসাদ : মুনাফার অঙ্ক বাড়াতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীর বিলের জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে একাধিক ইটভাটা।ভাটা মালিকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করেই ভাটার সামনে থাকা নদীর পাড়ের ও ফসলি জমির মাটি কেটে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশের নদ-নদীগুলো রক্ষায় যেখানে সর্বব্যাপী পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি, সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের আহরন্দ বিলের তিতাস নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিচ্ছে ইটভাটার মালিকেরা।
জানা গেছে, নদী খননের নামে কয়েক কিলোমিটার নদীর পাড়ের মাটি কেটে তা ইটভাটায় বিক্রি করেছেন প্রভাবশালী একটি চক্র এবং ইটভাটার মালিকেরা নিজেরাও তাদের মালিকানাধীন ভাটার সামনের নদীরপাড়ের ও ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের নেই কোনো নজরদারি। স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের বিপদে পড়বে নদী পাড়ের জমির মালিকেরা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আহরন্দ গ্রামের বিলের শেষ প্রান্তে তিতাস নদীর পাড় ঘেঁষে মেসার্স আশরাফ, সনি, রাইফা ব্রিকস নামে তিনটি ইটভাটা রয়েছে। বিলের আহরন্দ গ্রাম প্রান্ত থেকে নদীর তীর ধরে সোজা হেঁটে ইটভাটার কাছে যেতেই উধাও হয়ে যায় নদীর পার। প্রায় ২কিলোমিটার নদীর পাড় কেটে ফেলা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, আহরন্দ গ্রামের বিলে গড়ে উঠা মেসার্স আশরাফ, সনি, রাইফা ব্রিকসের মালিকেরা কয়েক কিলোমিটার নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিয়েছে। তাছাড়া ফসলি জমিরও মাটি কেটে নিচ্ছে যার ফলে আশপাশের ফসলি জমি ভেঙে পড়ছে। বিশেষ করে আশরাফ ব্রিকসের মালিক প্রভাব খাটিয়ে এখনো চালিয়ে যাচ্ছে নদীর পাড়ের মাটিকাটা।
আহরন্দ গ্রামের বাসিন্দা মোজাম্মেল মিয়া বলেন, ইটভাটার মালিকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার লোকজন তাদের ভয়ে কথা বলেন না। তাছাড়া অভিযোগ দিলেও প্রশাসনের লোকজন এদিকে আসেননা। তাই তারা তাদের ইচ্ছামত মাটি চুরি করে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মেসার্স আশরাফ ব্রিকস এর মালিক ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, আমি মালিকের কাছ থেকে জমি কিনে নিয়েছি। যার জমি তারা মাটি বিক্রি করে বিধায় আমরা মাটি কাটতে পারি। আর নদীর পাড়ের মাটি যারা নদী খনন করেছে তারাই বিক্রি করেছে বলেই আমি কিনেছি। তারা কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জানি এবং চিনি তারা কারা। তারা সরকার দলীয় নেতা-কর্মী। এ বিষয় নিয়ে আমি ঝামেলায় লড়লে তাদের সবার নাম বলে দিব।
তিনি আরো বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি সহ সব কিছুই আপডেট আছে আমার আর শুধু আমাকেই কেন জিজ্ঞাসা করছেন, পাশের ব্রিকস এ গিয়ে দেখেন তারা তো এখনো মাটি কাটছে।
আহরন্দ গ্রামের বাসিন্দা ইমরান হোসেন সহ কয়েকজন কৃষক জানান, নদীপাড় থেকে এভাবে মাটি কেটে নেওয়ায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ঝুঁকিতে পড়েছে নদীপাড়ের ফসলি জমি। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, যে কোনো সময় জমি গুলো ভেঙে পড়তে পারে। নদীপাড় থেকে মাটি কাটা ও তা বিক্রি বন্ধের দাবি জানিয়ে ইউপি সদস্য এর সাহায্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগও দিয়েছিলেন এলাকাবাসী। কিন্তু প্রশাসনের কোন সাড়া পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন তারা।
বাসুদেব ইউনিয়নের ইউপি সদস্য (মেম্বার) সেলিম মিয়া জানান, আমি নতুন নির্বাচিত হয়েছি। নদীর পাড় কেটে নেয়ার ব্যাপারে জানি তবে এই ব্যাপারে এখনো কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে এর আগে যিনি মেম্বার ছিলেন তার সাথে কথা বলতে পারেন।
সাবেক মেম্বার আব্দুল আজিজ বলেন, এ বিষয় নিয়ে এখন কিছু বলতে চাচ্ছিনা। আপনি পড়ে যোগাযোগ করবেন, এই ব্যাপারে আমার বুঝে বলতে হবে।
বাসুদেব ইউনিয়নের উপ সহকারি কৃষি অফিসার মোঃ মাজহারুল হক জানান, ফসলি জমি ও নদীর পাড়ের মাটি কাটার ব্যাপারে গ্রামবাসী বিচ্ছিন্নভাবে আমাদের একাধিক বার জানিয়েছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের তেমন কিছু করার ছিল না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তর এর উপপরিচালক মোঃ নূরুল আমিন জানান, মাটি কাটার অনুমতি জেলা প্রশাসন দিয়ে থাকে এখানে আমাদের কোন কিছু করার নেই। যদি প্রশাসন অনুমতি দিয়ে থাকে তবে বৈধ আর না দিয়ে থাকলে অবৈধ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রুহুল আমিন বলেন, আমি এই বিষয়ে অবগত নয়। আমি ইউএনওকে বলে দিচ্ছি বিষয়টি দেখার জন্য।