দুই শিশুর মৃত্যু; ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বন্ধ নাপা সিরাপ বিক্রি, তদন্ত কমিটি গঠন
পোস্ট করেছেন: মতপ্রকাশ ডেস্ক | প্রকাশিত হয়েছে: ১২/০৩/২০২২ , ৭:২২ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জেলা সংবাদ,প্রধান সংবাদ


ই এম আসাদুজ্জামান আসাদ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির পক্ষ থেকে নাপা সিরাপ বিক্রি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং ‘নাপা সিরাপ খেয়ে’ দুই ভাইয়ের মৃত্যুর অভিযোগের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত শুক্রবার (১১ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মহিউদ্দিনকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। একইদিন রাত ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু কাউসার নাপা সিরাপ বিক্রি বন্ধের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু নাপা সিরাপ খেয়ে দুই শিশু মৃত্যুর বিষয়টি সামনে এসেছে। এজন্য আমরা সমিতির সকল সদস্যকে সাময়িকভাবে নাপা সিরাপ বিক্রি বন্ধ রাখতে পরামর্শ দিয়েছি। ল্যাবরেটরি টেস্টসহ পরবর্তী ফলাফল না আসা পর্যন্ত নির্দেশনা কার্যকর থাকবে।’
এ ব্যাপারে ওষুধ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ড্রাগ সুপারেনটেনডেন্ট হোসেন মোহাম্মদ ইমরান জানান, নাপা সিরাপটি প্রকৃত অর্থে বেক্সিমকো কোম্পানির কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নাপা সিরাপ খেয়ে মারা গেছে, না অন্য কোনো কারণ আছে সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মেডিকেল টিম গঠন করা হচ্ছে। পোস্টমর্টেম ভিসেরা রিপোর্ট আসবে। কেমিক্যাল রিপোর্ট আসবে। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগার থেকে রিপোর্ট আসলেই আমরা বুঝতে পারব আসলে প্রকৃত ঘটনা কী।
আর গঠিত তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন ও ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. রফিক-উস-ছালেহীন। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুপুর সাহাকে প্রধান করে তিন সদস্যের পৃথক আরেকটি পরিদর্শন কমিটি করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ একরাম উল্লাহ জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি সরেজমিন তদন্ত করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। শনিবার (১২ মার্চ) থেকে কমিটির তদন্ত কাজ শুরু হয় । তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাদ রহমান জানান, দুই শিশু মৃত্যুর ঘটনায় আশুগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। তাদের পোস্টমর্টেম ও ভিসেরা রিপোর্ট আসলে পরবর্তী সময়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া নাপা সিরাপের আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি ল্যাবরেটরি টেস্ট করার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) বিকেলে আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুরে ইটভাটা শ্রমিক সুজন খানের দুই সন্তান ইয়াসিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫) জ্বরে আক্রান্ত হয়। পরে সুজনের স্ত্রী লিমা বেগম বাড়ির পাশের বাজারের মাঈন উদ্দিনের ওষুধের দোকান থেকে নাপা সিরাপ এনে খাওয়ান। ওই সিপার খাওয়ানোর কিছুক্ষণ পর থেকেই দুই শিশুই বমি করতে থাকে। একপর্যায়ে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে তাদেরকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসা জন্য জেলা সদর হাসাপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাতেই তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন চিকিৎসক। বাড়িতে নিয়ে আসার পথে প্রথমে বড় ভাই ইয়াসিন খানের মৃত্যু হয় এবং পরে বাড়িতে ফেরার পর ছোট ভাই মোরসালিন খানের মৃত্যু হয়।