নোয়াখালীতে দৈনিক মতপ্রকাশের প্রতিনিধি সুমনের উপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা
পোস্ট করেছেন: মতপ্রকাশ অনলাইন | প্রকাশিত হয়েছে: ০৩/০৪/২০২১ , ৭:৫১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জেলা সংবাদ


নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ১৬নং কাদিরপুর ইউনিয়নে শনিবার আনুমানিক দুপুর ১২ টায় ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকা দৈনিক মতপ্রকাশ ও ইয়ুথ বাংলা টিভির বেগমগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি আবুল হোসেন সুমনের উপর হত্যার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় বার হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এর আগে ৩০ মার্চ রাত আনুমানিক ১১ টা ৩০ মিনিটে তার উপর হামলা হয় । এসময় আশেপাশের লোকজনের হস্তক্ষেপে প্রাণে বেঁচে যান তিনি এবং হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেন গতকাল। সেই ঘটনার জের ধরে আবারও এই হামলা চালানো হয়।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাংবাদিক সুমনের বাড়ি বেগমগঞ্জের ১৬নং কাদিরপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে। একই ওয়ার্ডের কাজি বাড়ীর মাকসুদ কাজীর ছেলে তানিম বাপ্পি, সওদাগর বাড়ীর ইলিয়াসের ছেলে রাজু এবং ১৩নং রসুলপুর ইউনিয়নের চাঁন মিয়া বাড়ীর আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আনিস মির্জা অনেকদিন যাবত ২নং ওয়ার্ড ও লন্ডন মার্কেট এলাকায় মাদকের ব্যবসা, চোরা গাড়ি বেচাকেনা, জুয়ার আসর, চাঁদাবাজি ছাড়াও নানা রকম অপকর্ম করে আসছিলো। এর আগেও কয়েকবার তাদেরকে এসব না করতে সাবধান করেছিলেন সাংবাদিক সুমন। তখন থেকেই তারা ক্ষিপ্ত ছিলো। এরই জের ধরে এই তিনজন তাদের সাথে আরো লোকজন নিয়ে ২নং ওয়ার্ডের ফাজিল সরদারের বাড়ীর সামনে ফোরকানের দোকানে রাত ১১ টার সময় পিকনিক করার নাম করে জুয়ার আসর বসানোর চেষ্টা করে। যদিও ফোরকান রাত ১০টার আগেই দোকান বন্ধ করে বাড়িতে চলে যান। রাত ১১ টার সময় সন্ত্রাসীরা ফোরকানের বাড়িতে গিয়ে পিকনিক করার নাম করে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর-জবস্তি করে দোকানের চাবি নিয়ে আসে । এ অবস্থা দেখে ফোরকান সাংবাদিক সুমনকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। যেহেতু সুমন ও ফোরকান একই বাড়ীর, তাই সুমন দোকানে গিয়ে হাজির হয়ে বাপ্পি, রাজু ও আনিসকে অনুরোধ করে চলে যেতে। সুমন অনুরোধ করতেই বাপ্পি তাঁর উপর ক্ষিপ্ত হয়। বাপ্পি দোকান থেকে বটি নিয়ে সুমনকে কোপ দিতে গেলে কয়েকজন মিলে বাপ্পিকে আটকায়। পরে বাপ্পি, রাজু ও আনিস তিনজন মিলে সাংবাদিক সুমনকে মারধর করেন এবং সেখান থেকে চলে যাওয়ার সময় তাঁকে হত্যা করার হুমকি দিয়ে যায় । এ ঘটনায় সুমন তাৎক্ষণিক বেগমগঞ্জ উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও মাই টিভির জেলা প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দিন মিঠুকে বিষয়টি ফোনে অবগত করেন। পরের দিন তিনি সুমনকে হাসপাতালে দেখে এসে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। যেহেতু সুমন হাসপাতালে ছিলেন, তাই সকল সাংবাদিক মিলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, রবিবার সকলে মিলে একটি লিখিত অভিযোগ দিবেন জেলা পুলিশ সুপার বরাবর। কিন্তু এর আগেই সাংবাদিক সুমনকে দুপুর ১২ টায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আনিস মির্জার নেতৃত্বে তানিম বাপ্পি, রাজু ও আরো অনেকে মিলে বেধড়ক মারতে থাকে। একপর্যায়ে সুমন জ্ঞান হারালে তারা তাকে ফেলে চলে যায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এলাকাবাসী বেগমগঞ্জ মডেল থানায় খবর দিলে ওসি জনাব কামরুজ্জামানের নির্দেশে এস আই মোশতাক আরো দুজন পুলিশ নিয়ে গিয়ে সাংবাদিক সুমনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
এদিকে এই তিনজনের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায় , বাপ্পি সম্রাট বাহিনির একজন সক্রিয় ক্যাডার এবং নিজেকে যুবলীগ কর্মী বলে পরিচয় দেন। তার নামে হত্যা চেষ্টার মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায় , বাপ্পি প্রায়শই অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মানুষের উপর হামলা চালায়। এধরণের একাধিক ঘটনা সে আগেও ঘটিয়েছে। এছাড়াও লন্ডন মার্কেট এলাকা ও এর আশেপাশের এলাকায় মাদকের ব্যবসা ও জুয়ার আসর গুলো তার নিয়ন্ত্রণে। আরো জানা যায়, তার অত্যাচারে গ্রামের সব মানুষ অতিষ্ঠ। জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে এসে আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে যায় বলে মানুষজন ভয়ে কোন প্রতিবাদ করেন না। এক্ষেত্রে বিশেষ করে নিম্ন শ্রেণী পেশার মানুষেরা বেশি ভুক্তভোগী।
অন্যদিকে সওদাগর বাড়ীর ইলিয়াসের ছেলে রাজুর ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায় , সে একসময় বিএনপির একজন সক্রীয় কর্মী ছিল । আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিদেশে পাড়ি জমায় । গত দেড় বছর আগে দেশে ফিরে খোলস পাল্টে যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হয় । নিজেকে ১৬নং কাদিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ উদ্দিন সুজনের একনিষ্ঠ কর্মী বলে দাবি করে সে । আর এই পরিচয় ব্যবহার করেই সে মাদক ও চোরা গাড়ী বেচাকেনার ব্যবসা করে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের নোয়াখালী জেলা কমিটির সহ-সভাপতি পদ বাগিয়ে নেয় । এরপর তার অবৈধ কাজের পরিমাণ আরো বেড়ে যায়।
অভিযুক্ত আরেকজন আনিস মির্জা। সে নিজেকে যুবলীগের কর্মী বলে পরিচয় দেয় । তার কাজ বড় বড় নেতাদের সাথে ছবি তোলা এবং সে ছবিকে পুঁজি করে লন্ডন মার্কেট এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ও জুয়ার আসর নিয়ন্ত্রণ করা।
এই তিনজনের সংঘবদ্ধ মাদকের ব্যবসা, জুয়ার আসর এবং চাঁদাবাজির সত্যতা একাধিক সূত্রে পাওয়া গেছে। এলাকার কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় , কেউ ভয়ে এদের কিছু বলে না। এ ব্যাপারে ১৬নং কাদিরপুর ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব সালাউদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে, তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইন শ্ঙ্খৃলা বাহিনির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি জনাব আনোয়ার হোসেন ও নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার জনাব মোঃ আলমগীর হোসেন বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন। এ ঘটনায় এলাকাবাসী ও সাংবাদিক সমাজ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।