নারীদের রোগ বলে এড়িয়ে যাবেন না
পোস্ট করেছেন: মতপ্রকাশ অনলাইন | প্রকাশিত হয়েছে: ২১/০৩/২০২১ , ২:২৭ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: নারী ও শিশু,স্বাস্থ্য


জিন, অ্যানাটমি এবং হরমোনের মাত্রায় পরিবর্তনের কারণে কিছু রোগ পুরুষদের তুলনায় নারীদের বেশি আক্রমণ করে। তবে, ‘নারীদের রোগ’ বলে এড়িয়ে গেলে পুরুষরাও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন। আসুন জেনে নেই এমন সাতটি তথাকথিত ‘নারীদের রোগ’ সম্র্পকে, যা পুরুষদেরও আক্রমণ করতে পারে।
অস্টিওপোরোসিস
অস্টিওপোরোসিস হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস করে এবং ফ্র্যাকচারের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। নারীদের প্রতি তিনজনে একজন ঝুঁকিতে থাকেন, তবে পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতি পাঁচজনে একজন। মেনোপজের পরে নারীরা দ্রুত হাড় ক্ষয়ের সম্মুখীন হন। আর ৬৫ থেকে ৭০ বছর বয়সে পুরুষরা প্রায় একই হারে হাড়ের ভর হারাতে থাকেন।
কিডনি এবং থাইরয়েড সমস্যা, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি এবং স্টেরয়েড, ক্যান্সার থেরাপি ও খিঁচুনিপ্রতিরোধী (অ্যান্টি-কনভালস্যান্ট) এর দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার আপনাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। অনেক সময় লক্ষণ দেখা দিতে নাও পারে, তাই এরকম সময়ে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষা করুন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।
স্তন ক্যান্সার
নারীদের স্তনের টিস্যু বেশি থাকায় পুরুষদের তুলনায় নারীরা প্রায়ই স্তনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। যদিও স্তন ক্যান্সার মাত্র ১ শতাংশ পুরুষকে প্রভাবিত করে, তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে পুরুষদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। পুরুষরা সাধারণত লক্ষণগুলোতে খুব কমই মনোযোগ দেয়, তাই অলক্ষ্যেই স্তন ক্যান্সার বাসা বাঁধতে পারে।
বুকে কোনো অস্বাভাবিক লাম্প বা ত্বকে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
থাইরয়েডের সমস্যা
থাইরয়েড একটি ছোট গ্রন্থি, যা নিচের ঘাড়ের মাঝখানে অবস্থিত। যেখান থেকে বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য হরমোন নিঃসৃত হয়। যদি এটি অত্যধিক হরমোন উত্পাদন করে তবে হাইপারথাইরয়েডিজমের লক্ষণ দেখা দেয়। যার মধ্যে আছে-
- ক্লান্তি বা ফ্যাটিগ
- ওজন কমে যাওয়া
- ভুলে যাওয়া
- শুষ্ক, মোটা ত্বক এবং চুল
যদি থাইরয়েড পর্যাপ্ত হরমোন উত্পাদন না করে তবে হাইপোথাইরয়েডিজমের দেখা দেয়। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে
- ওজন বৃদ্ধি
- বিরক্তি
- পেশির দুর্বলতা
- ঘুম ব্যাঘাত
নারীদের থাইরয়েড হরমোনজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা পুরুষদের তুলনায় প্রায় পাঁচ থেকে আট গুণ বেশি।
খাওয়ার রোগ (ইটিং ডিজঅর্ডার)
কিছু মানুষ স্লিম আর সুন্দর হওয়ার চেষ্টা করলেও অনেকেই ইটিং ডিজঅর্ডার বা খাওয়ার রোগে পড়ে যান। এদের মধ্যে মাত্র ১০ থেকে ১৫ ভাগ পুরুষ, যারা অ্যানোরেক্সিয়া বা বুলিমিয়ায় ভোগেন। অনেকেই চিকিৎসা নিতে চান না। ফলে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। যার মধ্যে আছে-
- হার্টের সমস্যা
- হাড়ের ক্ষয়
- অর্গান ফেইলিউর
- এমনকি মৃত্যু
ক্রীড়াবিদ, স্থূল বালক, সমকামী এবং ট্রান্সজেন্ডার (হিজড়া) পুরুষ এবং যাদের মধ্যে উদ্বিগ্নতা বা পারফেকশনিস্ট ব্যক্তিত্ব রয়েছে, তাদের ঝুঁকি বেশি থাকে।
মূত্রাশয় সংক্রমণ
নারীদের মধ্যে মূত্রাশয়ের সংক্রমণ খুব বেশি দেখা যায়। তবে পুরুষদেরও হতে পারে – বিশেষত যাদের প্রসারিত (এনলার্জ) প্রস্টেট, কিডনি পাথর আছে বা যাদের মূত্রনালি অস্বাভাবিক সংকীর্ণ। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এর চিকিত্সা করা হয় এবং সাধারণত খুব কার্যকর।
মূত্রাশয়ের সংক্রমণের লক্ষণসমূহ-
- ঘন ঘন মূত্রত্যাগ
- মেঘকালো (ক্লাউডি) প্রস্রাব কিংবা রক্তাভ প্রস্রাব
- বারবার প্রস্রাব করার তাগিদ
- প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বা সুচ ফোটানো অনুভূতি
- হালকা জ্বর
বিষণ্ণতা
নারীদের হতাশায় ভোগার হার পুরুষদের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি। তবে এর কারণ হতে পারে তাদের হতাশার কারণ ও লক্ষণগুলো আলাদা। নারীরা বেশিবার দুঃখ প্রকাশ এবং কান্নাকাটি করতে পারেন, যা পুরুষরা সাধারণত পারে না।
পুরুষরা ড্রাগ বা অ্যালকোহলে আসক্ত হতে পারে কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে জড়িত হতে পারে। সময়মতো ও সঠিক চিকিত্সা না হলে আরো খারাপ পরিণতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকি আত্মহত্যা করার আশঙ্কাও বেশি থাকে।
লুপাস
লুপাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই নারী, তবে এই অটো-ইমিউন ডিজঅর্ডার পুরুষদের মধ্যেও দেখা দিতে পারে। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-
- জয়েন্ট ফোলা এবং ব্যথা
- পেশির দুর্বলতা
- চরম ক্লান্তি
- অব্যক্ত জ্বর
- চুল পড়া
- পা ফোলা
- চোখ ফোলা বা Puffiness
- মুখে ঘা
- গ্রন্থি ফুলে যাওয়া
- নাক এবং গালজুড়ে প্রজাপতি আকৃতির লাল ফুসকুড়ি
সময়মতো ডাক্তারের পরামর্শ নিন
গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়ার ব্যাপারে নারীদের চেয়ে পুরুষরা কম আগ্রহী। চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ কম এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ বেশি। ফলে হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগে মারা যাওয়ার আশঙ্কা নারীদের তুলনায় দেড় গুণ বেশি এবং নারীদের তুলনায় পুরুষরা গড়ে প্রায় পাঁচ বছর আগে মারা যায়।
আপনি যদি উপরোক্ত রোগসমূহের যেকোনোটির কোনো লক্ষণ অনুভব করেন, দেরি না করে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন এবং এবং প্রয়োজনীয় চিকিত্সা নিন। সকল প্রতিকূলতাকে পরাস্ত করে শরীরকে সুস্থ রাখুন।