দুর্লভ পাহাড়ি ময়না
পোস্ট করেছেন: মতপ্রকাশ ডেস্ক | প্রকাশিত হয়েছে: ১৬/০২/২০২১ , ৬:৪৯ অপরাহ্ণ | বিভাগ: চিত্র বিচিত্র

নাফিস আমিন: পাহাড়ি ময়না বা পাতি ময়না এছাড়াও সোনাকানি ময়না বলা হয়। পাহাড়ি ময়না মাঝারি কালো রঙের পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ২৯ সেমি, ডানা ১৭ সেমি, ঠোঁট ৩ সেমি, পা ৩.৫ সেমি, লেজ ৮ সেমি ও ওজন ২১০ গ্রাম। ভাত শালিকের তুলনায় এটি আকারে একটু বড়।
সাধারণ অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক পাখিকে পুরোপুরি চকচকে ঘোর কৃষ্ণবর্ণ দেখায়। প্রজননের সময় মাথা আর ঘাড়ে হালকা বেগুনী আভা দেখা যায়। পালকহীন চামড়ার পট্টি হলুদ এবং চোখের নিচে, মাথার পাশে ও পেছনে মাংসল উপাঙ্গ থাকে। উড়ার সময় ডানার সাদা পট্টি স্পষ্ট দেখা যায়, এমনিতে বসে থাকলে ডানা দিয়ে তা ঢাকা থাকে। চোখ কালচে বাদামি। ঠোট শক্ত ও হলুদ, ঠোঁটের আগা কমলা রঙের। পা ও পায়ের পাতা হলুদ। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারা একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ঠোঁট তুলনামূলক অনুজ্জ্বল হলদে-কমলা।
আমাদের দেশে সাধারণত ৩ জায়গায় পাহাড়ি ময়না পাখি দেখা যায়। বান্দরবান, সিলেট, ময়মনসিংহ। বান্দরবন জেলার ময়নাঃ এই ময়না পাখি লম্বা ধরনের হয়। ঠোঁট সরু ও হালকা কমলা রং ও ঠোঁটের অগ্রভাগ হলুদ হয়ে থাকে। মাথার চারপাশের মাংসল উপাঙ্গের রং হালকা হলুদ।
সিলেটের ময়নাঃ এই ময়না পাখির একটু মোটা ও গোল ধরনের হয়৷ ঠোঁট চওরা ও মোটা এবং ঠোঁটের রং মাঝারি লাল ও অগ্রভাগ হলুদ হয়ে থাকে। মাংসল উপাঙ্গ বেশি বড় ও লালচে হলুদ হয়ে থাকে।
ময়মনসিংহের ময়নাঃ এই ময়না খুব ছোট হয়। ঠোঁট বেশি লাল ধরনের ও মাংসল উপাঙ্গ কমলা ধরনের হয়ে থাকে। পা হলদে কমলা ধরনের হয়ে থাকে৷
পাতি ময়না সাধারণত আর্দ্র পাতাঝরা ও চিরসবুজ বন এবং চা বাগানে বিচরণ করে। পাহাড়ি এলাকার ঘন বন এদের পছন্দের জায়গা। এরা দলবদ্ধ অবস্থায় ৫-৬টি পাখির পারিবারিক দলে থাকে। বনের ধারে বা আবাদি জমিতে ও গাছের চূড়ায় খাবার খোঁজে। কখনও রসালো ফলের ঝোপে নামে তবে ভূমিতে নামার ঘটনা বিরল।
খাদ্যতালিকায় রয়েছে রসালো ফল যেমন; কলা, পেঁপে, আম, আনারস, কমলা, বটের ফল, চেরী ফল, ব্লুবেরি ইত্যাদি। তাছাড়াও এরা মৌমাছি, টিকটিকি, বিভিন্ন পোকামাকর, ফুলের মধু, প্রজনন মৌসুম এ এরা মেলওয়ার্ম খেয়ে থাকে। এই খাদ্য তালিকায় এরা সাধারণত আয়রন মুক্ত খাবার গ্রহণ করে। কারণ তাদের দেহে আয়রনের পরিমান বেশি।
স্ত্রী-পুরুষ ময়না আজীবনের জন্য জোড়া বাঁধে। সঙ্গী না মারা যাওয়া পর্যন্ত ওদের জোড় অটুট থাকে। বর্ষাকালে এরা প্রজনন করে। এপ্রিল-জুলাই মাসে বন অথবা চা বাগানের ধারে ১০-১৫ মিটার উঁচুতে গাছের কোটরে (সাধারণত কাঠঠোকরার সৃষ্ট) ঘাস, পালক ও আবর্জনা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো নীল, সংখ্যায় দুই-তিনটি। ডিমের মাপ ৩.৬ × ২.৬ সেমি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫। ছানারা উড়তে শিখলেই মা-বাবার কাছ থেকে সরে পড়ে।
ছবিটি সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে আমার তোলা। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান পাহাড়ি ময়না পাখির ডাকে শীসে মুখরিত থাকে কিন্তু এর দেখা পাওয়া এবং ভাল ছবি পাওয়া অসম্ভব ব্যাপার ।