ক্ষতি কাটিয়ে উঠে ফাগুণের উৎসবে লাভের মুখে গদখালীর ফুলচাষীরা
পোস্ট করেছেন: মতপ্রকাশ ডেস্ক | প্রকাশিত হয়েছে: ১৩/০২/২০২১ , ৬:০৯ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জেলা সংবাদ,বিশেষ প্রতিবেদন

নিশাত বিজয়: ফুলের রাজধানী যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে ফুলের মাঠ যেমন আকৃষ্ট করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটক-দর্শনার্থীদের, তেমনি এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে উঠেছে ফুল চাষের উপর ভিত্তি করে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে জনজীবনে স্থবিরতার জন্যে বাজার নষ্ট হয়ে যায়, এরপরে ২০ মে আম্ফান ঝড়ের কবলে ফুলের বাগান অধিকাংশ নষ্ট হয়ে যায়।
করোনা’র বিপর্যস্ত জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে যাওয়াতে পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ফুলের বাজার আবারও চাঙ্গা হয়েছে। এজন্য ঝিকরগাছার গদখালী, নাভারণ ও পানিসারা ইউনিয়নের বিস্তর্ণ মাঠজুড়ে ফুলচাষী’দের চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। তবে করোনা আর আম্ফানের মাঠ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়া অনেকে ধাক্কা সামলাতে পারেনি, এজন্য গতবারের চেয়ে ৩০০ হেক্টর কম জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। আবার অনেক কৃষক দেরিতে মাঠ প্রস্তুত করায় তাদের গাছে এখনও ফুল ফুটেনি এজন্য অনেকে বছরের মূল এই ফুল বেচাকেনার উৎসবে অংশ নিতে না পেরে আরেক দফা ক্ষতির মুখে পড়েছে।
সরেজমিনে গদখালী ফুল বাজার ঘুরে দেখা যায়, গ্লাডিওলাস এক’শ ফুল ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন রঙ ভেদে, গোলাপ এক’শ ফুল ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা , রজনী গন্ধা এক’শ ফুল ৬০০-৮০০ টাকা, জারভিরা এক’শ ফুল ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা, গাধাফুল এক হাজার ফুল ৩৫০ টাকা, জিপসি প্রতি আঁটি ৪০-৫০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা এক’শ ফুল ২০০ টাকা, কামিনীপাতা প্রতি আঁটি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। উৎসবকে ঘিরে আরও দাম বাড়বে বলে ফুলচাষীরা মনে করছেন।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার্স অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, গতবছর করোনা ও আম্ফানে অনেক ক্ষতি হয়েছে। করোনা’য় যখন বিক্রি শূণ্যের কোটায় নেমে আসে তখন মাঠেই নষ্ট হয়েছে কিংবা গরু-ছাগলে খেয়েছে। তবে গতবছরের ক্ষতি পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে না পারলে গতবছরের ৭০ শতাংশ বেঁচাকেনা হবে এবার। আমাদের গতবছর টার্গেট ছিল ৮০ কোটি টাকা। এবার নানা ক্ষতির কারণে টাকার সঠিক অংক বলতে পারছি না, তবে গতবছরের ৩০ শতাংশ কম হবে বলে ধারণা করছি। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে ২১ ফেব্রুয়ারী ফুল কম বিক্রি হবে এবার।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়, যার মধ্যে ১৫০০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয় যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার তিন ইউনিয়ন গদখালী, নাভারণ ও পানিসারা’তে। কিন্তু এবার আলুর কোল্ডস্টোরেজে ফুলবীজ সংরক্ষণে রেখেছিল চাষীরা, সেখানে অনেক বীজ নষ্ট হয়েছে। ফলে চাষীদের প্রায় ৩০ শতাংশ এই মৌসুমী উৎসবে ফুল বিক্রিতে অংশ নিতে পারছে না। এজন্য বড় একটা অংশ এবার ধানের চাষ করেছে। ফলে গতবারের চেয়ে প্রায় ৩০০ হেক্টর কম জমিতে ফুল চাষ হয়েছে।
গদখালীর সফল ও আধুনিক ফুলচাষী ইসমাইল হোসেন বলেন, বাজারে ফুলের দাম অনেক ভাল। চাষীরা হতাশ না, বেশ খুশি। গত বছরের থেকে এবার আমার না, যারা ফুল বিক্রি করতে পারছে তাদের সবার লাভ হবে। কারণ চাহিদার থেকে ফুল চাষ কম হয়েছে। আমার তিন বিঘা জমিতে চন্দ্রমল্লিকা চাষ করেছি, ১ লক্ষ টাকা লাভের আশা করছি। প্রতিবছর ফুলমেলা হয় ২১ ফেব্রুয়ারীকে উপলক্ষ্য করে, এবারও যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন ফুল মেলা করতে দেওয়া হয়। তাহলে আমাদের ফুল বেশি বিক্রি হবে।
তবে তার আধুনিক শেড করতে ৬০ লক্ষাধিক টাকা লেগেছিল কিন্তু আম্ফানের ঝড়ে তার শেড লন্ডভন্ড হয়ে যায়। যে বিনিয়োগ থেকে তিনি কোন লাভের মুখ দেখতে পারেননি, যার পুরোটায় আম্ফানে উড়ে গেছে।
হাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও ফুলচাষী আবুল হাশেম বলেন, আমি এবার দুইবিঘা জমিতে গ্ল্যাডিওয়াস করেছি। আমার ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাভ হবে। করোনার কারণে গত বছর ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। আশা করছি ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো।
নাভারণের তরুণ ফুল চাষী তরিকুল ইসলাম তরি বলেন,আমি গতবছর তিন বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করেছিলাম। কিন্তু করোনার ধাক্কায় বেচাকেনা বন্ধ হয়ে যায়, আবার আম্ফানে সব জমি নষ্ট হয়ে যায় সেজন্য মাঠ তৈরি করতে দেরি হয়েছে, ফুল আসেনি এখনও। আমি এবার ফুল বিক্রি করতে পারছি না।
ফুলচাষী গোলাম মোস্তাফা বলেন, আমি প্রতিবছর ৫ বিঘা জায়গায় ফুলের চাষ করি। এবার মাত্র ২ বিঘা জায়গায় চাষ করেছি। বাকি জায়গায় ধানের চাষ করেছি। কারণ গতবছর আম্ফানে মাঠ নষ্ট হয়ে গেলে অনেক টাকা ক্ষতি হয়েছে। এই মৌসুমে ফুল বিক্রির মতো হয়নি আমার গাছে সেজন্য ক্ষতির মুখে আছি কারণ মাঠ প্রস্তুত করার মতো টাকা আমার ছিল না সেসময়, পরে ধারদেনা করতে গিয়ে মাঠ প্রস্তুত করতে দেরি হয়ে গেছে।