করোনার থেকেও ভয়াবহ হবে জলবায়ু সংকটজনিত মৃত্যু!
পোস্ট করেছেন: অনলাইন ডেক্স | প্রকাশিত হয়েছে: ০৭/০২/২০২১ , ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: আন্তর্জাতিক


জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের মুখে রয়েছে পুরো বিশ্ব। এটি এখন আর কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব গত ২০ বছরে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা থেকে আমেরিকা মহাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে চলতি শতকের মাঝামাঝি নাগাদ প্রতিবছর এটি করোনাভাইরাস মহামারীর সমান মৃত্যুহারের কারণ হবে।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সাবেক গভর্নর মার্ক কার্নে বলেন, লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু এড়াতে জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় বর্তমান হারের দ্বিগুণ বিনিয়োগ প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সরকার মহামারী থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করলেও এ পুনরুদ্ধার যথেষ্ট পরিবেশবান্ধব হবে কিনা- তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও অর্থায়ন বিষয়ক দূত কার্নে বিবিসিকে বলেন, কভিড-১৯ মহামারী ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি সমান্তরাল ছিল। তবে মহামারীতে বিশাল অংকের প্রণোদনা পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করার কারণে আরো অনেক লোক মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আপনি জলবায়ু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে পারবেন না। এটির কোনো বিকল্প নেই। আমরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় পিছপা এবং অপেক্ষা করতে পারি না। এমনটি করলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।
আপনি যখন মৃত্যুহারের দৃষ্টিকোণ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি দেখেন তাহলে এ শতাব্দির মাঝামাঝি থেকে প্রতিবছর এটি করোনাভাইরাস সংকটের সমতুল্য হবে। আর কেবল একটি নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের বিস্তৃত প্রভাবের মুখোমুখি হতে হবে। সুতরাং এটি এমন একটি সমস্যা, যা এখনই চিহ্নিত করা দরকার।
মহামারীতে ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারগুলো ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ দিচ্ছে। এ নগদ অর্থের খুব কমই কার্বন নির্গমন হ্রাস করার দিকে পরিচালিত হচ্ছে। যদিও লকডাউনের কারণে কারখানা, ভ্রমণ সহ অর্থনৈতিক কার্যক্রম কমে যাওয়ায় গত বছর কার্বন নির্গমন কমে গিয়েছিল। তবে চলতি বছর অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি ফেরার সঙ্গে সঙ্গে কার্বন নির্গমনও বেড়ে যাবে।
এজন্য কার্নে নীতি নির্ধারক, প্রধান নির্বাহী, ব্যাংকার ও বিনিয়োগকারীদের পরিবেশের প্রতি মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জ্বালানি, টেকসই জ্বালানি ও টেকসই অবকাঠামোতে বিনিয়োগের পরিমাণ দ্বিগুণ হওয়া দরকার। আগামী তিন দশকে প্রতিবছর ৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের এক বিশাল সুযোগ রয়েছে। ব্যাংক, বিনিয়োগ তহবিল থেকে ব্যক্তি পর্যন্ত ক্রমবর্ধমানভাবে তাদের অর্থ কীভাবে ব্যবহৃত হবে- তা জানতে চায়। এটি কেবল কার্বন নির্গমন নিয়ে সংস্থাগুলো অবস্থান প্রকাশের বিষয় নয়। এ ধরনের বিনিয়োগ ও ঋণদানের সিদ্ধান্তই ঠিক করে দেবে, আগামীকাল আমরা কী পরিস্থিতিতে থাকবো। নবনির্বাচিত নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাত ধরে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র আবারো নেতৃত্ব পর্যায়ে আসীন হয়েছে। এ কারণে বিষয়টি এখন নতুন মাত্রা পেয়েছে। গত বছরের হিসাবে চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় দূষণকারী। দেশটি আগামী ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে। যদিও কয়লাচালিত বিদ্যুত্ কেন্দ্রগুলো নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে এবং জীবাশ্ম জ্বালানী থেকেই দেশটির ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে। এ কারণে দেশটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। কার্নে বলেন, চীনের কয়লা ব্যবহার স্পষ্টতই সমস্যার কারণ এবং দেশটি যত দ্রুত সমস্যা সমাধানে এগিয়ে চলবে, তাদের ও বিশ্বের পক্ষে ততই মঙ্গলকর। চীন কিন্তু বিশ্বজুড়ে সৌর প্যানেলের ৬০ শতাংশের উত্পাদন করে। দেশটি বৈদ্যুতিক যানবাহনের বৃহত্তম উত্পাদনকারীও। তাই চীনের অনেক দিক রয়েছে।