আজ: ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার, ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, বিকাল ৫:৪৭
সর্বশেষ সংবাদ
জেলা সংবাদ বিদেশে পড়াশুনা করেও সফল খামারি বগুড়ার বিপ্লব

বিদেশে পড়াশুনা করেও সফল খামারি বগুড়ার বিপ্লব


পোস্ট করেছেন: অনলাইন ডেক্স | প্রকাশিত হয়েছে: ০৬/০২/২০২১ , ৩:৫৫ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জেলা সংবাদ


কথায় আছে অদম্য ইচ্ছা শক্তি মানুষকে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে নিয়ে যায়। কাড়ি কাড়ি অলস টাকা থাকলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সফলতার ধারে যাওয়া যায় না। তাই মেধা আর প্রবল ইচ্ছাই মানুষকে তার স্বপ্নের বাস্তব সিঁড়িতে নিয়ে যায়। তেমনি একজন বগুড়ার তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব (৩৫)।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পাঁচকাতুলি গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের সন্তান বিপ্লব। তার বাবা বগুড়া শহরের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। থাকেন শহরের সূত্রাপুর ঘোড়াপট্টি লেনে। বাবার জুট মিল, হিমাগার, আমদানি-রপ্তানিসহ নানা ব্যবসা থাকলেও তৌহিদ পারভেজকে এসব কিছুই আকর্ষণ করতে পারেনি। ২০০৭ সালে পড়ালেখা করতে পাড়ি জমান উন্নত দেশ সুদূর নিউজিল্যান্ডে। পড়াশুনোর পাশাপাশি ছবি তুলতে ভালবাসেন তিনি। তৌহিদ পারভেজ বিপ্লবের ক্যামেরার ক্লিকের ছবি স¤প্রতি উইকিলাভস আর্থ আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থানের পুরস্কার অর্জন করেন ।

ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে ইনস্টিটিউট অব স্টাডিজে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেন ২০১০ সালে। বিদেশে পড়াশুনা করেও দেশে ফিরে চাকরির পিছনে ঘুরে সময় নষ্ট না করে প্রথমে আটা-ময়দার কারখানা (অটো ফ্লাওয়ার মিল) স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালে ৭টি এঁড়ে বাছুর কিনে নিজেই একটি গরুর খামার শুরু করেন। গড়ে তুলেছেন বগুড়া ভান্ডার ডেইরি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেড। তাঁর খামারে এখন দেশি-বিদেশি জাতের গরু আছে ৯১টি। তৌহিদ পারভেজ বলেন, একজন উদ্যোক্তা হয়ে সাধ্যানুযায়ী বেকার কর্মসংস্থানের লক্ষ্য। আর এই লক্ষ্য নিয়ে ডেইরি ফার্ম গড়া। বর্তমানে ৪৫ বিঘা জমির ওপর ধান ও বিদেশি জাতের ঘাসের চাষ আর গরুর খামার দিয়ে তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গর্ব বোধ করি।
তাঁর খামার ও কারখানায় বর্তমানে কাজ করেন প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক। তিনি বলেন করোনা মহামারিতেও শ্রমিকরা খামারে কাজ করছেন। শ্রমিকদের নিজ উদ্যোগে দিয়েছেন ত্রাণ। করোনাকালীন গত দুই ঈদে সব শ্রমিককে বোনাসও দিয়েছেন। এছাড়া, গত বছরের কোরবানির ঈদে তার খামারের গরু বিক্রি করে অর্ধকোটি টাকা লাভ করেছেন বলেও জানান তৌহিদ পারভেজ।
তিনি বলেন, মাছ চাষ ও ফলের বাগান করার ইচ্ছে থাকলেও দেশে ফিরে ময়দার মিল শুরু করি। মিল থেকে ভুষি ছাড়াও গমের একধরনের খুদ বা পশুখাদ্যের উপযোগী বর্জ্য জমা হয়। এসব বর্জ্য কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটার উপায় খুঁজছিলাম। সময়টা ২০১০ সাল। সে বছরের কোরবানির ঈদে বাবার সঙ্গে হাটে গিয়ে একটা নাদুসনুদুস গরু কিনলাম। মাংস রান্নার পর মুখে দিয়ে বোকা বনে গেলাম। খালি চর্বি, স্বাদ নেই। বুঝলাম, বেশি লাভের আশায় অল্প সময়ে অসৎ উপায়ে মোটাতাজা করা হয় গরুটিকে।
পরে সিদ্ধান্ত নিলাম, নিজের পছন্দমতো পশু কোরবানির জন্য গরু পালন করব। ময়দা কারখানার ভুষি আর পশুখাদ্যের উপযোগী বর্জ্য কাজে লাগাতেই ছোট পরিসরে গরুর খামার করার সিদ্ধান্ত নিলাম।’ তৌহিদের ভান্ডার ডেইরি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্মে ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল ও দেশি জাতের ৩৫টি গাভি আছে। এছাড়াও দেশি-বিদেশি জাতের মোটাতাজা এঁড়ে গরু আছে অর্ধশত। বাছুর আছে ছয়টি। প্রতিদিন ৬টি গাভি থেকে গড়ে ১০০ লিটার দুধ হয়। প্রতি লিটার দুধ ৪০ টাকা দরে খামার থেকেই বিক্রি হয়ে যায়।
বিপ্লব বলেন, আমাদেও দেশের শিক্ষিত ছেলেরা চাকরির পিছনে না ঘুরে সামান্য পুঁজি নিয়েও যদি কৃষি কিংবা কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তাহলে সফল হওয়া সম্ভব।
বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম তালুকদার বললেন, গরু মোটাতাজা ও দুগ্ধখামার গড়ে সফলতা পেয়েছেন তৌহিদ। তার উদ্যোগ দেখে এলাকার শিক্ষিত বেকার তরুণরাও ডেইরি খামারের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।

Comments

comments