ট্রাম্পের হার মানা না মানায় কার ক্ষতি কার লাভ!
পোস্ট করেছেন: অনলাইন ডেক্স | প্রকাশিত হয়েছে: ২৩/১১/২০২০ , ৩:৫৩ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: আন্তর্জাতিক


‘চুরি বন্ধ করো’। গত ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ এবং আংশিক ফল ঘোষণার পর রিপাবলিকানদের স্লোগান হয়ে উঠেছে এই বাক্যটি। নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে ৬০ লাখের বেশি পপুলার ভোট পেয়েছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো ফল মেনে নিয়ে পরাজয় স্বীকার করেননি যা মার্কিন ইতিহাসে ব্যতিক্রমী ঘটনা। ট্রাম্পের এই পরাজয় স্বীকার করা বা না করায় গণতন্ত্র, নির্বাচন এবং দেশের নেতৃত্ব নিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে ক্ষতি আর লাভেরও হিসাব করা হচ্ছে।
মার্কিন গণতন্ত্রের চরম ক্ষতি
মার্কিন প্রভাবশালী মিডিয়া সিএনএন বলছে, পরাজয় স্বীকার না করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রমাণ ছাড়াই বারবার দাবি করছেন, ভোটে ব্যাপক কারচুপি এবং জালিয়াতি হয়েছে। এটা হয়তো সত্য নয়। কিন্তু একটা মিথ্যা তথ্য একজন প্রেসিডেন্টের মুখ দিয়ে বারবার উচ্চারণ করায় তার দলের সদস্যদের মনে গেঁথে দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক জরিপেও এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, অর্ধেকের বেশি রিপাবলিকান মনে করেন, জো বাইডেন জালিয়াতি করেই জিতেছেন। ভোটগ্রহণ এবং ফলাফল নিয়ে একটা সংশয় দেখা দিয়েছে মানুষের মনে যা আগে কখনো ছিল না। ট্রাম্পের সঙ্গে তার দলের অনেক নেতা এবং কংগ্রেসের শীর্ষ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। এমনকি মিশিগানের রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পরও বলেছেন, রাজ্যে নির্বাচনে বড় ধরনের অনিয়মের কথা তাদের জানা নেই। কিন্তু রাজ্যের রিপাবলিকান নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব ঘটাতে নির্বাচনী বোর্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যাতে অনিয়মের বিষয়টি আবার নিরীক্ষা করা যায়। এতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির ভোট নিয়ে মার্কিনীদের মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হচ্ছে।
বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা কঠিন হবে
জো বাইডেন ২০ জানুয়ারি ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। আর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প ঐদিন বিদায় নেবেন। কিন্তু হার স্বীকার না করে বিশ্বের কাছে দেশের মূলত দ্বি-দলীয় গণতন্ত্রের যে দৃশ্য ট্রাম্প ফুটিয়ে তুলেছেন তা মেরামত করা বাইডেনের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জের হবে। কারণ তৃতীয় বিশ্বের কোনো দেশেও ভোট নিয়ে কিছু বলতে গেলে বাধার মুখে পড়তে হবে বাইডেন প্রশাসনকে। ইরাক এবং আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করছেন ট্রাম্প যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতি হবে। কারণ ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী সৈন্য প্রতাহারের পক্ষে সাফাই গাইলেও জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান মার্ক মিলি এর বিরোধিতা করেছেন। ইয়েমেন যুদ্ধে নতুন নীতি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে তড়িঘড়ি করে অস্ত্র বিক্রি, ইরান ও চীনের ওপর আবার নিষেধাজ্ঞা, ইসরাইলের দখল করা এলাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে পাঠানোয় নতুন করে এসব নীতি পালটানো বাইডেনের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে। সিএনএনের বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শেষ মুহূর্তের এসব সিদ্ধান্ত ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাইডেনকে ভোগাবে।
ট্রাম্প-সমর্থকদের ক্ষতি
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তার মন্ত্রিসভার অনেকেই আছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও তো এখনো ট্রাম্পের ফের প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার এরই মধ্যে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। শীর্ষ সিনেটর ও কংগ্রেসম্যান, বিভিন্ন রাজ্যের রিপাবলিকান নেতা, কট্টর জাতীয়তাবাদী এবং শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের বিভিন্ন গ্রুপ ট্রাম্পের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ট্রাম্প হার মানলে এবং হোয়াইট হাউজ থেকে বিদায় নিলে এসব মার্কিনীদেরই ক্ষতি হবে।
বিশ্বের কিছু নেতা আছেন যাদের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কাজ করেছেন তাদের পথ-নির্দেশক বা চালিকা শক্তি হিসেবে। তাদের একজন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারো। তিনি নিজেই ২০১৮ সালের নির্বাচনে জেতার জন্য প্রচারণায় নিজেকে ‘গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের ট্রাম্প’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও নিজেকে প্রথাবিরোধী রাজনীতিক হিসেবে মনে করেন। গত বছর পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর ট্রাম্প অভিনন্দন জানিয়ে বরিস জনসনকে উল্লেখ করেছিলেন একজন ‘টাফ ও স্মার্ট’ নেতা হিসেবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই বলেছিলেন, তারা তাকে ‘ব্রিটেনের ট্রাম্প’ হিসেবে ডাকে। ব্রেক্সিট ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কঠোর অবস্থান নিতে বরিস জনসনকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাই তার বিদায়ে বিশ্বের এসব নেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
স্বস্তি পাবে সুপ্রিম কোর্ট!
ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার করলে প্রথমত ডেমোক্রেটিক পার্টি তথা নির্বাচিত জো বাইডেন হয়তো হাফ ছেড়ে বাঁচবেন। উদারপন্থীরা জোরেশোরে নিঃশ্বাস নেবেন। ট্রাম্প প্রশাসনের অনেকে নির্বাচনী বিতর্ক শেষ হলে প্রশাসনিক ঝামেলা থেকে রক্ষা পাবেন। মার্কিন মিডিয়া ইউএসএ টুডে জানিয়েছে, তবে সবচেয়ে বেশি স্বস্তি পাবে সুপ্রিম কোর্ট! ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার করলে নির্বাচনী কোনো মামলা আর সুপ্রিম কোর্টে যাবে না। এতে বিচারকদেরও বিব্রত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভোটের আগেই প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে প্রণীত স্বাস্থ্য কর্মসূচি অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট বাতিল, সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণ, ট্রাম্পের করের তথ্য প্রকাশ ও অভিবাসীদের নাগরিকত্ব সংক্রান্তসহ বিভিন্ন মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। ট্রাম্প বিদায় নিলে এসব মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের তেমন একটা বেগ পেতে হবে না।