বোচাগঞ্জে ৫ প্রতিবন্ধী সন্তানসহ পরিবারের ৮ সদস্যের ১টি মাত্র কুড়েঘর
পোস্ট করেছেন: অনলাইন ডেক্স | প্রকাশিত হয়েছে: ২২/১১/২০২০ , ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: জেলা সংবাদ


৫ জন প্রতিবন্ধি সন্তানসহ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৮ জন, ঘর মাত্র ১টি, সুস্থ্য ১ ছেলেকে পড়া লেখা করেও বাড়ী ছাড়তে হয়েছে সংসার চালানোর জন্য। আর ৫ জন প্রতিবন্ধী ছেলেকে একঘরে রেখে বাইরে কুড়েঘরের বারান্দায় ঘুমাতে হয় বাবা-মা‘কে।
এই চিত্রটি দেখা গেছে দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার ৪ নম্বর আটগাওঁ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের লোহাগাওঁ গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর মোজাম্মেল হকের বাড়ীতে।
সরেজমিনে গিয়ে দিন মজুর মোজাম্মেল হকের বাড়ীতে দেখা যায়, চারদিকে খড়ের ছাউনি ঘেরা উপরে িিন¤œমানের টীন দিয়ে তৈরি একটি মাত্র ঘর। সেই ঘরের ভিতরে দুটি বিছানায় গাঁদাগাঁদি করে শুয়ে বসে আছেন ৫টি প্রতিবন্ধী ছেলে বিপ্লব(২০), ইশাদ (১৮), রাজু (১২), রিয়াদ (৮) ও আকতারুল (৬)। আর তাদের বাবা মা থাকেন বারান্দায় একটি চৌকিতে। আর এসএসসি পাস করে বাবাকে সহযোগীতার জন্য বাড়ী ছেড়ে ঢাকায় গার্মেন্টেসে চাকুরি নিয়েছে। অসহায় এই পরিবারটির বসবাস। বাবা মোজাম্মেল হক দিন মজুরের কাজ করেন। আর মা বিউটি বেগমের দিন কাঁটে প্রবিবন্ধী এই ৫ সন্তানের পরিচর্য়ায়। ৬ জন ছেলের মধ্যে ৪ জন বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী, ১ জন বাকপ্রতিবন্ধী। এক ছেলে সুস্থ্য সে থাকে ঢাকায়।
দিন মজুর মোজাম্মেল হক (৫৫) বলেন, অসহনীয় কষ্টের সংসার। এই সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে। ৮ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারে থাকার মাত্র ১টি শোবার ঘর। সেই ঘরে ছেলেরা থাকে। আমি ও আমার স্ত্রী কি শীত, কি বর্ষা বারান্দায় রাত্রি যাপন করি। ছেলেরা প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে। কিছুটা রক্ষা পেয়েছি। আগে সন্তানদের তিন বেলা খেতে দিতে পারতামনা। এখন ডাল ভাত খায়। তবুও যেনো অভাব দূর হচ্ছেনা ।
তিনি বলেন, নিজস্ব সম্পদ বলতে ৫ শতাংশ জমির উপরে একটি কুড়ে ঘর ছাড়া কিছুই নেই। টাকার অভাবে বাড়ী করতে পারচ্ছেন না। অর্থের অভাবে একমাত্র সুস্থ ছেলেকে ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টেসে কাজ করতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার চাওয়া সরকারিভাবে আমাকে একটি ঘড় করে দিলে আমি সন্তানগুলোকে নিয়ে নিরাপদে বসবাস করতে পারি।
প্রতিবন্ধি সন্তানদের মা বিউটি বেগম (৪৫) বলেন, প্রতিবন্ধি সন্তান গুলোকে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। অনেক সময় তাদের জন্য আমার বাবা মাসহ প্রতিবেশীদের কাছে হাত পাততে হয়। আমি তো মা, যেমনই হউক, আমি তাদেরকে পেটে ধরেছি, শত কষ্টেও তাদের মুখে যখন হাঁসি দেখি তখন কষ্ট গুলো ভূলে যাই। আমার স্বামীর ৫ শতাংশ জমি আছে। সরকার যদি এই জমির উপর একটা ঘড় করে দেয় তাহলে সন্তান গুলোকে নিয়ে বাঁচতে পারি।
এ ব্যাপারে বোচাগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. পিয়ারুল ইসলাম জানান, আমরা নজরে আসার পর তিন ছেলে সন্তানের প্রতিবন্ধি ভাতা কার্ড করে দিয়েছি। আর দুই ছেলে আগে থেকে ভাতা পেতে। মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রত্যয় হচ্ছে। শতভাগ প্রতিবন্ধি ভাতার আওয়াতায় আনা। এই ধারাবাহিকতায় মোজ্জামেলের পরিবারে সকল প্রতিবন্ধি ছেলে সন্তানকে প্রতিবন্ধি ভাতা করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সমাজসেবা পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধী জন্য সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থা আছে। মোজাম্মেল হক ব্যবসা করতে চাইলে আমি তা ব্যবস্থা করে দিতে পারব।