১০ বছর ধরে ফুটপাথেই ভিক্ষুক-জীবন পুলিশ অফিসারের!
পোস্ট করেছেন: অনলাইন ডেক্স | প্রকাশিত হয়েছে: ১৫/১১/২০২০ , ১:১৩ অপরাহ্ণ | বিভাগ: আন্তর্জাতিক


নদীর মতোই বহতামান জীবন কাকে যে কোথায় কোন খাদের কিনারায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করায়! না হলে ভারতের মধ্যপ্রদেশ পুলিশের দক্ষ শ্যুটার, এক পুলিশ অফিসারকে বিগত এক দশক ধরে রাস্তায় ভিক্ষুকের জীবন কাটাতে হবে কেন!
এই নয় কী তাঁর পরিবার নেই। স্বজন নেই। স্বজন-পরিবার-ঘরদোর সবই আছে। কিন্তু, সব থেকেও কিছুই যেন তাঁর নেই। সব সম্পর্ক-রহিত নিঃস্ব ভবঘুরের জীবন। কবে যে শেষ ঘরের চৌকাঠে পা রেখেছিলেন! পরিবারও যে বাড়ির ছেলেটাকে আগলে রাখার চেষ্টা করেছিল, তা-ও হয়তো নয়। হয়তো আন্তরিকতার অভাব ছিল।
জীবনের কোনও বাঁকে নিজেকে অপাংক্তেয় মনে করেছিলেন সংসারে! তাই ফুটপাথই দশ বছর ধরে ঠিকানা হয়ে ওঠে মনীষ মিশ্রার। পরম আত্মীয় বলতে ধুলো চিটচিটে একমাথা চুল। গালভর্তি না-কামানো দাড়ি। পথের ধুলোমাখা জীবনে ওরাই সঙ্গী বারো মাস। কেউ করুণা করলে খাবার জুটেছে। না হলে অভুক্ত সারাদিন।
আসলে মানসিক ভারসাম্য হারানোর পরেই মনীষের জীবনে সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যায়। যা অনুধাবন করার মতো বোধ-বিচার তাঁর মধ্যে আর অবশিষ্ট ছিল না। মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে কে-ই বা চাকরিতে রাখে! পুলিশের চাকরিটা চলে যায় তাঁর। তাই মনীষ মিশ্রা এখন প্রাক্তন অফিসার। ‘পাগল’ ছেলে কোথায় কী করে বসে, তাই পরিবারও দূরে ঠেলে দেয়। জীবনের এই নাটকীয় মোড় মনীষকে এনে দাঁড় করায় রাস্তায়!
এ ভাবেই চলে যাচ্ছিল। কিন্তু, জীবন তো এক জায়গায় থেমে থাকে না। মনীষের ক্ষেত্রেও তাই আর একবার নাটকীয় মোড় নিল এই সেদিন। পুরনো ব্যাচমেটদের সঙ্গে দেখে হয়ে যাওয়ার পর। মনীষকে দেখে তাঁরা চিনতে পারেননি। চুলদাড়িতে ঢেকে যাওয়া সতীর্থকে ভবঘুরের বেশে চেনার কথাও নয় যদিও। কিন্তু, মনীষের চিনতে ভুল হয়নি। এর পর যা ঘটে, তা কম নাটকীয় নয়।
মধ্যপ্রদেশ উপনির্বাচনের ফল ঘোষণার পর রাস্তায় বেরিয়েছিল বিজয় মিছিল। সেই বিজয় মিছিল ঘিরে অপ্রীতিকর কিছু যাতে না ঘটে তা দেখার দায়িত্বে ছিলেন ডিএসপি রত্নেশ তোমর ও বিজয় ভাদোরিয়া। বন্ধন ভাটিকার কাছে ফুটপাথে হঠাত্ই তাঁদের নজর যায় এক ভিক্ষুকের দিকে। কী মনে করে পরনের ভালো জ্যাকেটটি পুলিশ অফিসার বিজয় তাঁর হাতে তুলে দেন। আর এক অফিসার রত্নেশ সিং তোমর দেন একজোড়া নতুন জুতো। ফিরে আসছিলেন তাঁরা। কিন্তু, ওই ভিক্ষুক ভাদোরিয়ার নাম ধরে ডাকায় বিস্মিত হন অফিসার। এক লহমা দাঁড়িয়ে আবারও এগিয়ে যান ওই ভিক্ষুকের দিকে। জিগ্যেস করে জানতে পারেন তিনি মনীশ মিশ্রা।
মনীষ… নাম শুনে ব্যক্তিটিকে চিনে নিতে অসুবিধে হয়নি দুই পুলিশ অফিসারের। ১৯৯৯ সালের ব্যাচমেট! একদা সতীর্থের এমন পরিণতিতে ব্যথিত হন। মনীষকে তাঁরা সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু, মনীষের তীব্র আপত্তিততে শেষ পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এক আশ্রমে। সেখানেই তাঁর মানসিক চিকিত্সারও ব্যবস্থা হয়েছে। মনীষের বাবা ও কাকা দু’জনেই অ্যাডিশনাল এসপি পদে থেকে অবসর নিয়েছেন। মনীষের ভাই থানার অফিসার ইনচার্জ। তাঁর বোন কাজ করেন দূতাবাসে। ডাটিয়া জেলায় শেষ পোস্টিং ছিল সাব-ইনস্পেক্টর মনীষের। তার পরেই মানসিক অসুস্থতা।
এই দশ বছরে ভোপালের একাধিক আশ্রমে, ভবঘুরে কেন্দ্রে তাঁকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু, প্রতিবারই শেষ পর্যন্ত তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তাঁর পরিবারেরও দাবি, মনীষকে তাঁরা ঘরে ধরে রাখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা চাই, আবার সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন দাপুটে সাবেক পুলিশ অফিসার।