লক্ষ্মীপুরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে খাল থেকে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন
পোস্ট করেছেন: অনলাইন ডেক্স | প্রকাশিত হয়েছে: ১৫/১১/২০২০ , ১০:১০ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অপরাধ,জেলা সংবাদ


অবৈধভাবে বেড়ির খাল থেকে বালু উত্তোলনের কারণে যে কোন সময় শহর রক্ষা বেড়ি ধসে পড়ে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ার জোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বসতবাড়ি, ফসলি জমি,রাস্তা ইতোমধ্যে ভেঙ্গে গেছে। এতে স্থানীয়দের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। গত চার বছর ধরে টানা হেভিওয়েট ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। এনিয়ে প্রশাসনকে বারবার অবহিত করেও কোন ফল মিলছে না।
এমন ভয়াবহ বালু উত্তোলনের ঘটনাটি লক্ষ্মীপুর জেলা সদরের ১নং উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড বেড়ির খাল যা জামতলি ও বরইতলা সড়কের পাশে বলে পরিচিত।
সেলিম পাটোয়ারী নামক জনৈক ব্যক্তি বিভিন্ন পরিচয়ে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে টানা চার বছর ধরে বেড়ির খাল থেকে হেভিওয়েট ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। এ ঘটনাটি নিয়ে বারবার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরেই জেলা প্রশাসনের আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে এই নিয়ে কথা উঠে। তবুও অদৃশ্য কোন শক্তির অবৈধ প্রভাবে সেলিমের হেভিওয়েট ড্রেজার মেশিন দ্বারা বালু উত্তোলন করা বন্ধ হয়নি।
বালু উত্তোলনের কারণে বন্যা রক্ষাবাঁধ বেড়ি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। যে কোন সময় বেড়ি ভেঙে পড়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে দুটি রাস্তা, একটি কালভাট, একটি বাড়ি ও ফসলি জমি ভেঙে পড়েছে। স্থানীয়রা বালু উত্তোলন বন্ধে মানববন্ধন, স্মারকলিপি পেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করলেও বালু উত্তোলন বন্ধ বা থেমে থাকেনি। স্থানীয় বাচ্চু নামের একজন জানিয়েছেন-‘আমরা বালু উত্তোলন বন্ধে মানববন্ধন করেছি কেন সে কারণে বালুখেকো সেলিম পাটওয়ারী মামলা দিয়ে আমাদের উল্টো হয়রানি করেছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের অনেকেই জানান-‘ প্রশাসনিক প্রতিকার চেয়ে বারবার ধর্ণা দিয়েও কোন লাভ হয়না।’ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যক্তি জানান-‘একবার ইউএনও অফিস থেকে এক লোক এসে হ্যান্ডেল নিয়ে গেছে। পরের দিন আবার মেশিন চলছে, বালু উত্তোলন চলছে। আমরা প্রতিবাদ করলে শত্রু হই, মামলার আসামি হই।’
যে প্রতিবাদ করতে আসে তাকেই চাঁদাবাজির মামলায় আসামি করে হয়রানি করা হয় বলে জানা গেছে। সে কারণে ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস করে না।
বেড়ি ভেঙ্গে গেলে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হবে। যা ইতোমধ্যে ফসলি জমি, বাড়িঘর ও রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে হেভিওয়েট ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলক সেলিম পাটোয়ারীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
চাঁদপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিদর্শক উত্তম কুমার বলেন-‘আমি এটা জানিনা, এখন আপনার কাছে শুনেছি। বিষয়টি স্যারকে অবগত করব।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম জানান, ‘আমি লক্ষ্মীপুরে নতুন পদায়ন করেছি, আপনি একটু কষ্ট করে এসিল্যান্ডের নাম্বারে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবগত করুন।’
এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) মো. মামুনুর রশীদকে বার বার কল করেও বক্তব্য নেয়া যায়নি।
জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল বলেন, ‘এ বিষয়ে নির্বাহী অফিসারকে জানান। তাকে অবগত করলে বিষয়টি ক্লিয়ার হবেন।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন-‘আমি বিষয়টি শুনেছি, তবে আমরা কোন প্রতিকার নিলে সেলিম পাটোয়ারী হাইকোর্ট থেকে রায় নিয়ে আসেন।এতে আমাদের আর করার কিছুই থাকে না।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এই প্রকৌশলী বলেন, ‘আমরা যদি তাকে কোন প্রকার অথেন্টিক কিছু দিয়ে থাকি তবে তা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ক্যানসেল করা হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’