গাজীপুরের শ্রীপুরে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস মেতেছিল অনাথরা
পোস্ট করেছেন: মতপ্রকাশ ডেস্ক | প্রকাশিত হয়েছে: ৩১/০৩/২০১৯ , ১২:১৮ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: জেলা সংবাদ,ঢাকা বিভাগ

মহিউদ্দিন আহমেদ , শ্রীপুর (গাজীপুর )প্রতিনিধি:
কেউ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, শারীরিক প্রতিবন্ধী, আবার কেউ বাক প্রতিবন্ধী, কারো বাবা নেই, কারো বা মা নেই, তারা সবাই অনাথ। তাই ওদের আশ্রয় হয়েছে সরকারী আশ্রমে।
গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে দিনটি ছিল সম্পূর্ণই ভিন্ন আমেজের। অন্যান্য দিন দেশের বিভিন্ন এলাকার দর্শণার্থীদের আগমনে পার্কটি মুখরিত থাকলেও সাধারণ দর্শণার্থীদের পাশাপাশি আজকের দিনটি ছিল শুধুই অনাথ শিশু-কিশোরদের।
একযোগে প্রায় ১ হাজার অনাথ শিশু-কিশোর আনন্দ, হাসি আর উল্লাসে মেতে উঠার পাশাপাশি বিনে পয়সায় পার্কের সকল ইভেন্ট ঘুরে দেখার সুযোগ লাভ করেছিল।
শনিবার সকাল থেকেই ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলার ২৯টি সরকারী আশ্রমের হাজারের উপর শিশুদের উল্লাসে মুখরিত ছিল গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক।
টাঙ্গাইল সরকারী শিশু সদনের ১০বছর বয়সী শিশু আঞ্জুমানারা। জন্মের পরই বাবা মারা যান, মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর তার আশ্রয় হয় জেলা শহরের সরকারী আশ্রমে। আগে সরকারী ভাবে বিভিন্ন সময় বিনোদনের চাহিদা পূরণ হলেও এবারটা ভিন্ন, কারণ সে সুদুর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা বাঘ ও সিংহ দেখতে পেয়েছে, এতেই সে খুবই উল্লাসিত।
ঢাকার মিরপুরের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সোহেল চৌধুরীর (১৪) বাড়ি মাদারীপুরের শিবচরে হলেও প্রায় ৭বৎসর ধরে সরকারী আশ্রমে রয়েছেন। সাফারী পার্কে আসতে পেরে সেও আনন্দে ভিন্ন মাত্রা খোঁজে পেয়েছে। চোখে দেখতে না পেলে পেলেও সে বিভিন্ন প্রাণীর ডাক ও চিৎকার চেচামেচিতে আনন্দ পেয়েছেন।
ভাল গান গাইতে পারেন অপর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মফিজুল হক (১২)। উল্লাসে শরীরে সামান্য ক্লান্তি আসায় সে গাছের ছায়ায় বসে গান ধরেছে “নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে, সকল বাঁধা পেড়িয়ে…. আর অন্যান্যরা মনোযোগ দিয়ে তার গান শুনছে। গান শেষ হলে সে জানায় , সে এসেছে ফরিদপুর থেকে, একজন প্রতিবন্ধী হয়েও এতদূর আসতে পেরেছে এ জন্য উদ্যোগ গ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানায় ।
ময়মনসিংহের অনাথ কিশোরী রোজিনা আক্তার (১৩) জানায় , বিভিন্ন জনের কাছে সে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের কথা শুনেছে। এবার এটি দেখার সুযোগ পেয়েছে। সে সবার সাথে সকাল থেকেই ঘুরে দেখছে, এটাই যেন তার আনন্দ।
টাঙ্গাইল সরকারী শিশু সদনের (বালক) উপ-তত্বাবধায়ক নুরে লাইলা ৫০জন অনাথ শিশু কিশোর নিয়ে এসেছেন। তিনি জানান, এরা সবাই অসহায় হলেও সরকার এসব শিশু কিশোরদের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাদের বাবা ও মায়ের অভার পূরণ করা না গেলেও তাদের অন্যান্য সবকিছুই সরকার পূরণ করে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় এই সাফারী পার্কে শিশুরা আসতে পেরে খুবই উল্লাসিত। এবার বিনোদনে তারা নতুন মাত্রা পেয়েছে।
কিশোরগঞ্জের সরকারী শিশু পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সাবিতা আলম তাঁর কেন্দ্রের ৪২জন অনাথ শিশু কিশোর নিয়ে বিভিন্ন ইভেন্ট দেখছেন সকাল থেকেই। তিনি জানান, প্রথমবারের মত সাফারী পার্কে অনাথরা আসতে পেরে খুবই আনন্দিত। তারা একটি নির্দিষ্ট গন্ডির ভিতর থেকেই বড় হচ্ছে। তবে এত বড় পরিসরে সকল অনাথরা একসাথে চিত্তবিনোদনের সুযোগ পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।
গাজীপুর জেলা সমাজসেবা বিভাগের উপ-পরিচালক এসএম আনুয়ারুল করিম জানান, গত ২৮ই ও ২৯ই মার্চ গাজীপুরের কোনাবাড়িতে অবস্থিত দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পূনর্বাসন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতা। এতে ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলার ২৯টি সরকারী শিশু পরিবার কল্যান কেন্দ্রের প্রায় এক হাজারের উপর অনাথ শিশু, কিশোর ও প্রতিবন্ধীরা অংশগ্রহণ করেন। তবে দুর দুরান্ত থেকে এসব অনাথরা একসাথে হওয়ায় তাদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক পরিদর্শণের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। অনাথ শিশুদের চিত্তবিনোদনের ভিন্ন মাত্রা দেয়ার বিষয়ে মূল উদ্যোক্তা ছিল গাজীপুরের জেলা প্রশাসনের।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা একসঙ্গে এতগুলো অনাথ শিশুদের কথা বিবেচনা করেই সরকারী উদ্যোগে বিনামূল্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক দর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এসব অনাথদের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কে লজ্জার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক তাবিবুর রহমান জানান, সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রায় এক হাজার অনাথ শিশুদের বিনামূল্যে প্রবেশ সহ সকল ইভেন্টই বিনামূল্যে পরিদর্শনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। অনাথদের আগমনে সকাল থেকেই পার্কটি হৈ হুল্লোড় ও উল্লাসে মুখরিত ছিল।