রাকিবুল বাসারের একগুচ্ছ কবিতা
পোস্ট করেছেন: মতপ্রকাশ ডেস্ক | প্রকাশিত হয়েছে: ১৮/০২/২০১৯ , ৪:০৫ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সাহিত্য

- হৃদ মাঝারে হৃদিতা
হৃদিতা , বৃষ্টি শেষে মাটির বুক চিড়ে ভেসে আসা সোঁদা গন্ধের মতন ভালোবাসি তোকে ,
আচ্ছা হৃদিতা , ভালোবাসা কোথায় বাস করে ? বুকের মাঝে ?
মনে? নাকি মগজে ?
হৃদিতা , মনটাইবা কোথায় থাকে ?
হৃদপিণ্ডে নাকি মগজে ?
কিসব অদ্ভুত ভাবনা এসে যায় তোকে ভালোবাসার কথা জানাতে গিয়ে !
হৃদিতা , হৃদপিন্ডের ক্রিয়াবন্ধ হয়েই মৃত্যু হয় ,
তোর জন্য আমার ভালোবাসা হৃদপিণ্ডেই হয়তো বাস করে ,
তুই আমার হৃদ মাঝারে হৃদিতা ।
- রাজীব হায়দার (জঙ্গিদের হাতে নিহত ব্লগার রাজীব হায়দার স্মরণে)
রাজীব হায়দার , প্রিয় ভাই আমার
কবর দেশে কেমন আছো তুমি ?
আচ্ছা তুমি কি আমাদের কথা শুনতে পারো ?
এখনো কি তোমার মাঝে আবেগ কাজ করে ?
ফুটপাতের ধারে দাঁড়িয়ে চটপটি খেতে ইচ্ছে করে না আর ?
রাজীব হায়দার , প্রিয় ভাই আমার
বলো না কবর দেশে কেমন কাটছে একাকী সময় ?
তোমার হত্যাকারীরা আজো বেঁচে আছে ,
জানিনা কবে মামলার রায় কার্যকর হবে ।
আজো বসে আছি বিশ্বাস নিয়ে ,
একদিন দেখো ঠিকই ওদের ফাঁসি হবে …।
- কৈফ মজনুন (প্রয়াত মাহাবুবুল হক শাকিল স্মরণে)
তোমার চলে যাওয়ায় কবিতা হারিয়েছে তাঁর ছন্দ ,
পড়ে আছে শূন্য পথে তোমার এই ভক্ত …
কৈফ মজনুন, তোমার চলে যাওয়ায়
অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যৎ দেখছে আমার দুচোখ ,
এক পৃথিবীর কালোস্রোত যেন ধেয়ে এসেছে আমার দিকে ,
তমশাময় অবাক করা প্রান্তর,
তবু চেয়ে আছি জোছনাহীন আকাশের ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদের দিকে….
কৈফ মজনুন, তুমি তারা নাকি চাঁদ হয়ে রয়েছ আকাশে ?
জানি ফিরবে না তুমি , তবুও চেয়ে থাকি নিভৃত চিত্তে
অবিচ্ছিন্ন আলোর মাঝে শূন্যতার ছোঁয়ায়
ধাঁধায় পূর্ন চারিদিক ।
কৈফ , এতোই কি তাড়া ছিল তোমার চলে যাবার?
চলেই যদি যাবে তবে কেন এতো আপনজন হয়েছিলে ?
- মাধবীলতা তুমি কেমন আছো ?
মাধবীলতা তুমি কেমন আছো ?
তুমি কী ভালো আছো মাধবীলতা ?
কতোদিন দেখা হয় না তোমার আমার ….
মাধবীলতা জানো ,
আমার বুকের গভীরে
তুমিই ছুঁয়েছিলে স্পর্শ-কাতর পংক্তিমালা
কাব্যের এ জীবন ।
আমারদিকে তাকিয়ে দেখো মাধবীলতা
,তোমায় কয়েকদিন দেখতে না পেয়ে
পাগলাটে অনিমেষ হয়ে গেছে যেন
জীবন-কাব্যের অগোছালো পংক্তিমালা ,
তবুও রঙিন স্বপ্ন বুকে
আর তোমার ভালোবাসায় বেঁচে আছে অনি ,
বুকে তার অনন্ত বিশ্বাস
মাধবী কখনইঅনিকে ছেড়ে যাবে না ।
- আত্মার চিৎকার
হয়তো কোনো এক সকালে ঘুম ভেঙে দেখবে তোমার পাশে প্রাণহীন আমার দেহ , এমনো হতে পারে, আজ রাতেই তোমার ঠোঁটে আমার শেষ চুম্বন ,
তোমার বুকের ঘ্রাণ পেতে উদগ্রীব হয়ে থাকবে আমার আত্মা ,
নিথর দেহের সাথে আত্মার দূরত্ব ঘোচানোর কোনো উপায় থাকবে না সেদিন , সেদিনও আমার আত্মা চিৎকার করে বলবে তোমায় , “ভালোবাসি” ,
কিন্তু শুধু তুমি নও, এ পৃথিবীর কেউ শুনবে না সে চিৎকার ..
- আমি কয়েদি
নাজিমুদ্দিন রোডের জেলখানায় আজ সপ্তম দিন আমার,
সাতটা দিন কিভাবে কেটে গেল জানিনা !
জেলখানা থেকে তোমার হলের দূরত্ব খুবই অল্প,
এই মাঝ রাতে তুমি ঠিক কি করছো ?
আমার যেমন তোমাকে জড়িয়ে ,
ঠিক তোমারও কি তেমন আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে ইচ্ছে করছে ?
প্রিয়তমা মন খারাপ করো না ,
ঘুমিয়ে যেও সময় মতন ।
জানো ,
নাগরিক কোলাহলের বিপরীতে এই আবদ্ধ জেলখানায় একটুও ভালো লাগে না আমার ।
দেয়ালের ওপারে ওঠা ভোরের সূর্যের সাথে বড় অমিল এখানে …
অপরাধী না হয়েও মগজের গহীনে গেঁথে গেছে , “আমি কয়েদি” ।
লোহার গারদ তোমার আমার মাঝে যেন দুই পৃথিবী !
দেয়ালের ওপারের মানুষগুলো স্বাধীন,
আর আমি নিরাপরাধ হয়েও বিনা বিচারে বন্দী ।
এপাশের পৃথিবী নিষিদ্ধ,
তাইতো তুমি দেখা করতে এলেও মাঝখানে লোহার বেড়াজাল । এখানে দেয়াল জুড়ে চকের আঁকিবুকি আর কয়লার দাগ ,
তারমাঝেই একপাশে বসে , তোমার জন্য লিখছি
আমার এ গদ্যময় কবিতা , নাকি চিঠি?
- ভয় নেই প্রিয়তমা
ভয় নেই প্রিয়তমা ,
ছুঁয়ে দেখ এইতো আমি তোর পাশেই ।
অক্টোপাসের মতন জড়িয়ে রেখেছি
ভালোবাসার বাঁধনে ।
চিরন্তনী মৃত্যু ছাড়া
আরতো কেউই পারবে না এ বাঁধন ছিঁড়তে ।
ভয় নেই প্রিয়তমা,
তোর দেহের প্রতিটি অঙ্গে
আমার অস্তিত্ব জানান দিবো
আজ এ রাতে …
- সেদিন ফার্মগেটে
সেদিন ফার্মগেটে
খদ্দের খোঁজা এক বালিকার সাথে দেখা।
ভদ্র সমাজের চোখে বারবনিতা বা বেশ্যা,
অথচ গল্পে গল্পে জানা হল অনেক কিছুই,
বালিকাটিরও স্বপ্ন ছিল,
প্রেমিককে স্বামী বানিয়ে ঘর করার আশা ছিল।
অথচ মিথ্যে প্রেমের ফাঁদে বালিকা আজ বেশ্যা !
হায়রে প্রেমিক পুরুষ !
তুই জানোয়ার নাকি শুয়োরের বাচ্চা ?
- সুখের কবিতা
জীবন হতে অমঙ্গল ধূমকেতুকে তাড়িয়ে দিয়েছো তুমি কোটি নক্ষত্রের অন্তরীক্ষে ,
ব্যর্থ কুহেলিকার রঙ আজ জায়গা পায়না আমার জীবনে ,
তোমার দুহাত ধরে রঙিন স্বপ্নের ভিতর পথ চলছি আমি ,
জীবন কাব্যের অগোছালো পংক্তিমালা আজ “সুখের কবিতা” ,
তুমি , তুমি এই তুমিই আমার সুখ , আমার ভালোবাসা
- পরী
( অসমাপ্ত কবিতা- ” পরী” , উৎসর্গ – প্রিয়তমা ঋতু মজুমদার )
নদীর কাছে যে ভাবে নতজানু হয় চড় ভাঙা মানুষ ,
সেভাবেই আমি নতজানু তোর বুকের ঘ্রাণ পেতে ,
নাভিমূলে মৌমাছির হুল ফুটানোর যে যন্ত্রণা ,
তার থেকে বেশি যন্ত্রণা হয় তোর চোখে অশ্রু জল দেখে ,
পরী , এ জীবন শুধু তোর জন্য ,
পরী , এ ভালোবাসা শুধু তোর জন্য …
- ধর্মের বাঁধ ভাঙার জন্য
মানুষের রূপে দেবতার দেখা চেয়েছিলাম ।
যিনি অভুক্তের দেয়া পূজার প্রসাদ খেয়ে নয়,
অভুক্তকে খাইয়ে
মাটির দেবতার অক্ষমতা ধরিয়ে দেবেন ।
- বিচ্ছেদ
বিচ্ছেদ হটাত্ করে হওয়াই শ্রেয় …..আমি চাই পৃথিবীর সাথে আমার বিচ্ছেদটাও এমন হোক ! হটাত্ একদিন চলে যেতে চাই না ফেরার দেশে ,যে দেশ থেকে ফেসবুকে স্টাটাস কিনবা কমেন্টস করা যাবে না ..একদিন সবকিছু থাকবে শুধু আমি থাকবো না ….চলে যাবো ,সবাইকেই চলে যেতে হয় …এ পৃথিবীর বুঁকে কেউই চিরস্হায়ী নয় ..
- সাধারণ জনগণ
সার্কাসের ভাগ্যহত ক্লাউনের মতন আমরা সাধারন জনগন ,
সার্কাস দলের মালিক যেভাবে ক্লাউনকে চালায় তাকে সেভাবেই চলতে হয় ।
সার্কাসের মালিক পক্ষের মতন আচরন আমাদের দেশের সরকারী দলগুলোর,
বছরের পর বছর আমরা ক্লাউন হিসেবে ব্যবহৃত হই ।
আমরা ছেঁড়া জামায় ,রোদ্দুরে পুঁড়ে যাই আর ওরা খেলা দেখে ,
টাকার মালিক হয়ে বগল বাজায় !
- শীতল ঠোঁটের স্পর্শ
সে এক স্বর্গীয় অনুভূতি ,
প্রথম চুম্বন প্রিয়ার ঠোঁটে ,
শীতল ঠোঁটের স্পর্শ
সে স্বাদ যেন অমৃতের ।
আমার বুক কাঁপে ,প্রিয়ার শরীর কাঁপে ।
বিদিক শূন্য হয়ে যাই
কয়েক সেকেন্ডে ।
আমার ঠোঁট তার ভেজা ঠোঁটের দরজা খুলতে অবিরাম প্রচেষ্টায় মত্ত ,
বুঝি তার ঠোঁটের কারুকাজ বড়ই লাজুক সক্রিয় ,
তারপর নিস্ক্রিয় হয়ে যাই ।
- নারী
ও নিমাই বাবু ,তোমার পান্ডুলিপি বদলে দাও ,
মেম সাহেব শুধু মরবে কেন বলো ?
কালো-সাদা বলে মানুষের মাঝে
ভেদাভেদ কেন আনো ?
কৃষ্ণকলি মেম সাহেবকে কেন মৃত্যুর পথে টানো ?
কালো মেয়ে নাকি জগতের আলো ?
শুধু কেন তোমার গল্পে নয় ?
বলো না নিমাইবাবু ?
ও শরত্ বাবু ,তোমার পান্ডুলিপি বদলে দাও ,
অনুরাধা শুধু কেন পথ চেয়ে থাকে ?
নিজে করতে পারেনা কিছু !
বলো না শরত্ বাবু ?
ও শরত্ বাবু ,তোমার গল্পে
বিলাসীরা কেন আত্মহত্যা করে ?
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ,
কেন চলতে তারা না পারে ?
ও বিশ্বকবি,তুমিতো বিশ্বের
নতুন দিনের রবি ,
হৈমন্তী কেন তবুও তোমার গল্পে-
ধুঁকে ধুঁকে মরে ?
কেন সে স্বামী নিয়ে ,
সুখের সংসার করতে না পারে ?
ও রবীন্দ্র বাবু ,তাই বলছি
তোমার পান্ডুলিপিটা বদলে দাও ।
আজ নারী জাগরণের জোয়ার তোল ,
বেগম রোকেয়ার পথ ধরে ,
নারীকে তার প্রাপ্য আসনে
অধিষ্টিত করো ।
লিখেছেনঃ রাকিবুল বাসার রাকিব, সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক মতপ্রকাশ