রমজানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা
পোস্ট করেছেন: মতপ্রকাশ ডেস্ক | প্রকাশিত হয়েছে: ২৫/০৫/২০১৮ , ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: স্বাস্থ্য

রমজান মাসে অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যের অভিযোগ করেন। মূলত অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, গোশতজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া, পানি কম খাওয়া কিংবা আঁশজাতীয় খাবার কম খাওয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। এজন্য খাবারে তরিতরকারি বেশি খাওয়া, ফলফলাদি খাওয়া, সালাদ খাওয়া, বেশি বেশি পানি পান করা হলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
রমজানে পেপটিক আলসার
যাদের পেপটিক আলসার রয়েছে তারা অনেকেই রোজা রাখতে ভয় পান। তারা মনে করেন খালি পেটে থাকলে তাদের এসিডিটির মাত্রা বাড়বে। বাস্তবে তা নয়। আসলে রোজা রাখলে সাধারণত এসিডিটি বাড়ে না। এ ধরনের রোগীদের প্রধান কাজ হলো নিয়মিত খাবার খাওয়া, নিয়মিত ঘুমানো ও নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ। রোজায় মানুষ একটি নির্দিষ্ট নিয়মে চলে বলে এ সময় এসিডিটির মাত্রা অনেকাংশে কমে আসে। পেপটিক আলসারের রোগীরা কোনোভাবেই ভাজাপোড়া খাবেন না। স্বাভাবিক খাবারদাবার তাদের কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না।
গর্ভাবস্থায় রোজা
গর্ভাবস্থায় অনেকেই রোজা রাখেন। আবার কেউ বা রোজা ছেড়ে দেন। তবে গর্ভবতী মায়ের যদি শারীরিক কোনো জটিলতা না থাকে তাহলে তার রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই। বিশেষ করে প্রথম কয়েক মাস সহজেই রোজা রাখা যায়। অনেকে গর্ভের প্রথম তিন মাস বমিভাব বা বমির কারণে রোজা থেকে বিরত থাকেন। এজন্য চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ মাসে রোজা রাখতে অনেকের সুবিধা হয়। গর্ভাবস্থায় রোজা ছাড়ার বিধান থাকলেও একজন বিশেষজ্ঞ মুসলিম চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোজা ছাড়া উচিত।
রোজা রেখে রক্ত পরীক্ষা
অনেকে মনে করেন, রোজায় প্রয়োজনীয় রক্ত পরীক্ষা করা যায় না কিংবা রক্ত পরীক্ষা করলে রোজা ভেঙে যায়। ইসলামী জ্ঞানী ব্যক্তিরা অভিমত দিয়েছেন, রোগীর চিকিৎসার প্রয়োজনে রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত বের করলে রোজা ভঙ্গ হবে না। কেননা, চিকিৎসক অসুস্থ ব্যক্তির জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হলে রোজা অবস্থায় রক্ত পরীক্ষার নির্দেশ দিতে পারেন।
রমজানের খাবার
রমজানে ইফতারে আমরা হরেকরকম ভাজাপোড়া খেতে থাকি, যা রসনা তৃপ্তিকর বটে, কিন্তু পেটের জন্য ক্ষতিকর। রাসূলুল্লাহ সাঃ ইফতার করতেন টাটকা খেজুর দিয়ে। যদি তিনি পাকা খেজুর না পেতেন, তাহলে শুকনো কয়েকটি খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি শুকনো খেজুর না হতো, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করতেন (আবু দাউদ)। আর যখন তিনি ইফতার করতেন তখন এই দোয়া বলতেন : জাহাবাস জামা উ অবতাল্লাতিল উরুক্কু অজাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ। অর্থাৎ পিপাসা দূরীভূত হলো, শিরা-উপশিরা সতেজ হলো এবং ইনশাআল্লাহ সওয়াব সাব্যস্ত হলো (আবু দাউদ)। আমাদের দেশে আমরা সাধারণভাবে চিঁড়ার শরবত বানাতে পারি। চিঁড়া ভিজিয়ে মথে নিয়ে মধু অথবা কলা সহযোগে এ শরবত তৈরি করা যায়। আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে, রঙিন পানীয় দ্বারা ইফতার করা ক্ষতিকর। কারণ রঙটি শরীরের ক্ষতি করে। সেহরি খাওয়ার সময়ও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যাতে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার না খাওয়া হয়। মাছ, তরকারি, দুধভাত অথবা মুরগির গোশত এ সময় বেশ উপযোগী। সাথে ফলফলাদি থাকলে আরো ভালো।
রোজা অবস্থায় দাঁত তোলা
যদি কারো দাঁতের রোগ অসহ্য হয়, অর্থাৎ ব্যথা-বেদনা তীব্র হয়, যখন দাঁত তোলা ছাড়া কোনো বিকল্প থাকে না তখন রোজা অবস্থায় দাঁত তোলা হলে রোজা ভঙ্গ হবে না বলে ইসলামী জ্ঞান বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। তাদের যুক্তি হচ্ছে, দাঁত তোলার পরে যে রক্ত প্রবাহিত হয়, তাতে রোজা ভঙ্গ হয় না। কারণ এতে শিঙ্গা লাগানোর মতো প্রভাব পড়ে না। তাই রোজাও ভঙ্গ হবে না।
রোজায় মেসওয়াক করা
দাঁতের যত্নে দাঁত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। রমজানেও এর ব্যতিক্রম নয়। অনেকে রোজার দিনের প্রথম ভাগে রোজা নষ্ট হওয়ার ভয়ে দাঁত মাজন থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু ইসলামী জ্ঞান বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে, দিনের প্রথম ভাগে যেমন, শেষ ভাগেও তেমন মেসওয়াক করা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, মেসওয়াক হচ্ছে মুখের পবিত্রতা ও প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। রাসূল সাঃ আরো বলেন, আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে না করলে আমি প্রত্যেক নামাজের সময় তাদের মেসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।
হাঁপানি রোগীর রোজা
আমাদের দেশে প্রায় এক কোটি লোক হাঁপানিতে ভোগেন। তাদের অনেকেই রোজায় হাঁপানির কষ্ট বেড়ে যাবে বলে রোজা রাখা থেকে বিরত থাকেন। তবে কষ্টের মাত্রা বেশি হলে রোজা ছাড়ার বিধান রয়েছে। তাই রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে হাঁপানি রোগীদের রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভিমত হচ্ছে, রোজা হাঁপানি রোগীদের কিছুটা স্বস্তি দেয়। তা ছাড়া হাঁপানি রোগীর দিনের বেলায় ইনহেলার ব্যবহার করতে কোনো অসুবিধা নেই বলে ইসলামী জ্ঞান বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন।
রোজা মানসিক চাপ কমায়
রোজা ইবাদতের মাস। যারা অতিরিক্ত মানসিক চাপে ভোগেন তারা এ মাসটিকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারেন। রোজায় কুরআন তিলাওয়াত, কুরআন অধ্যয়ন ও কুরআন চর্চায় মনোনিবেশ করলে মানসিক চাপ অনেকাংশে কমে যাবে। এ ধরনের ব্যক্তির কুরআনের যে কোনো একটি সূরাকে এ মাসে বিশেষভাবে অধ্যয়নের জন্য বাছাই করতে পারেন। তা ছাড়া কিয়ামে রমজান অর্থাৎ তারাবি নামাজ আদায়ের মাধ্যমেও তার মনে স্বস্তি আসবে। এ মাসে বেশি বেশি দান-খয়রাত করা এবং সৎকর্ম করা দরকার। যার মাধ্যমে মনের অনাবিল শান্তি আসতে পারে।