খালেদা জিয়াকে কারাগারে যে কক্ষে রাখা হয়েছে তা বাসযোগ্য নয়: রিজভী
পোস্ট করেছেন: মতপ্রকাশ ডেস্ক | প্রকাশিত হয়েছে: ২৩/০৫/২০১৮ , ৪:২৩ অপরাহ্ণ | বিভাগ: প্রধান সংবাদ,রাজনীতি

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে রাজক্রোধে ক্ষমতার জোরে বন্দি করে রেখে বিনা চিকৎসায় ধুকে-ধুকে কষ্ট দিয়ে মারতে চাচ্ছে। বেগম জিয়াকে কারাগারে যে কক্ষে রাখা হয়েছে, তা বাসযোগ্য নয়। কক্ষটি নানা অসুখ-বিসুখের আক্রমণের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য নিকট-আত্মীয়রা পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়েছিলেন। তারা জানিয়েছেন, স্যাঁত-স্যাঁতে, জ্বরাজীর্ণ ভবন দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকলে যা হয় এখন সেইরকমই অবাসযোগ্য ও নানা অসুখ-বিসুখ আক্রমণের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার বাস করার কক্ষটি। অসংখ্য পোকামাকড়ে আকীর্ণ কক্ষটিতে বাস করা যেন নরকবাস। তার শরীরে পোকামাকড়ের দংশনে তিনি আরো বেশি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ঘাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা এবং বামহাতটা অবিরাম ব্যথার কারণে শক্ত হয়ে উঠেছে। দুই পায়ে ক্রমাগত ব্যথা হচ্ছে এবং সেগুলো ভারি ও ফুলে উঠছে। মাত্র কিছুদিন আগে চোখে অস্ত্রোপচার হওয়ার কারণে দুই চোখই সারাক্ষণ জ্বালাপোড়া করতে থাকে। এর সঙ্গে বহুপ্রাচীন দেয়ালগুলো থেকে ঝরেপড়া সিমেন্ট ও বালি চোখ দুটোর অবস্থা আরো গুরুতর অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ব্যথায় চোখ দুটো সবসময় লাল হয়ে থাকে। রুমটি ভেজা-ভেজা ও অস্বাস্থ্যকর ধুলাকীর্ণ থাকার কারণে তার কাশি প্রতিদিন বেড়েই চলছে।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, বার-বার দাবি করা সত্ত্বেও তাকে সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত না করা সম্পর্কে আমরা যে কথাগুলো বলেছি অর্থাৎ দুঃসহ জীবনযাপনে বাধ্য করে তিলে-তিলে বিপন্ন করে তোলাই সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য- সেটিই বাস্তবায়িত হচ্ছে। সরকারের নির্দেশিত চিকিৎসকদের পরামর্শও জেল কর্তৃপক্ষ কানে তোলেনি। কারণ কর্তৃপক্ষের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে সরকারি হুংকার। এই কারণে এখন পর্যন্ত তাকে অর্থপেডিক্স বেড দেয়া হয়নি। বিশেষায়িত হাসপাতালে এমআরআই পরীক্ষা ইত্যাদি অগ্রাহ্য করেছে কর্তৃপক্ষ। জালিমশাহীর হিংস্রতায় ক্রমাগত জর্জর করে তোলা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়াকে। ক্ষমতার নেশায় নিজেরা কণ্টকমুক্ত হতেই বেগম জিয়ার উপর চালাচ্ছে নিপীড়ন-নির্যাতন।
রিজভী বলেন, সারাদেশ অনাচারে ভর্তি হয়ে গেছে ক্ষমতাসীন দলের দৌরাত্মে। অবৈধ ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত বল্গাহীন লুটপাট আর রাতারাতি বিত্তবৈভবের মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতায় চর্চিত হিংসার স্ফূরণ সারা বাংলাদেশকেই যেন মনুষ্যহীন বিরানভূমিতে পরিণত করছে। আওয়ামী সরকার দম্ভে ও গর্বে আত্মস্ফীত হওয়ার কারণেই নিজেরাই বেআইনী অপরাধ করতে কুণ্ঠিত হচ্ছে না। দেশব্যপী মাদকনির্মূলের অভিযানে মানুষ হত্যার আতিশয্যে এক বিকারগ্রস্ত পন্থা চারদিকে দৃশ্যমান হচ্ছে।
গত ৯ দিনে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৪৩ জন, নিহত ব্যক্তিদের মাদক ব্যবসায়ী বলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে প্রকৃত বড়-বড় মাদক ডিলাররা অন্তরালে থেকে যাচ্ছে কিভাবে? প্রভাবশালী মন্ত্রীদের বাড়িতে তারা দেখা-সাক্ষাৎ করছে। চারদিকে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে, সরকারি এই মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে। সন্দেহভাজনদেরও হত্যা করা হচ্ছে কোন উদ্দেশ্যে? যতবড় অপরাধী হোক তা বিচারবর্হিভূত হত্যার সুযোগ নেই। আমি গতকালও বলেছিলাম এই মাদকবিরোধী অভিযানের নামে মানুষ হত্যার উৎসবে এরা বেছে-বেছে সরকারবিরেধী নির্দোষ তরুণদেরও অপরাধী সাজিয়ে হত্যা করবে। তার-দৃষ্টান্ত আমরা গতকাল তুলে ধরেছি ক্রসফায়ারে নিহত নেত্রকোনার ছাত্রদল নেতা আমজাদ হোসেনের ঘটনায়। বিচারবর্হিভূতভাবে নির্বিচারে বন্দুকযুদ্ধে মানুষ হত্যায় পৃথিবীর কোথাও সামাজিক অপরাধ দমন করা যায়নি। রাষ্ট্র যদি নানা অপরাধের পৃষ্ঠপোষক হয়, রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদের যদি বৈধসত্তা না থাকে, তাহলে তাদের দ্বারা সৃষ্ট বেআইনি কর্মকাণ্ড বীভৎস্যরূপে আত্মপ্রকাশ করবেই।
এই বিচারবর্হিভূত হত্যা ধীরে ধীরে সরকারবিরোধী লোকজনদের নির্মূলে ব্যস্ত হয়ে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন অনেকেই। মাদকের পশ্চাদভূমি বন্ধ না করে, গডফাদারদের না ধরে শুধু ক্রসফায়ারের হিড়িক অব্যাহত রাখলেই মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। সারাদেশে মাদকের নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে এই ক্ষমতাসীনদের আমলে, ক্ষমতাবানদের পৃষ্টপোষকতায়। এই সকল ঘটনার মধ্য দিয়ে তারা দেশকে রক্তাক্ত নির্বাচনের দিকে নিয়ে যায় কিনা সেটি নিয়েও এখন মানুষ ভাবছে।